কুমিল্লায় বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হলেও কমেনি মানুষের দুর্ভোগ

19

পাহাড়ি ঢলে কুমিল্লার কয়েকটি উপজেলা প্রায় এক সাপ্তাহের বেশী সময় বন্যার পানিতে তলিয়ে থাকার পর ধীরে ধীরে বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হলেও কমেনি মানুষের দুর্ভোগ। পানি নামতে শুরু করায় স্পষ্ট হচ্ছে বন্যাকবলিত জনপদের ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ। সব হারিয়ে নিঃস্ব মানুষগুলো এখন সরকারি-বেসরকারি সহযোগিতার জন্য তাকিয়ে আছেন।
বন্যা কবলিত এলাকাগুলোর আশ্রয়কেন্দ্র থেকে মানুষ ফিরে এসে নিজের বাড়ি ঘর চিনতে পারছেন না, ঘর আছে দুয়ার নাই, ঘরের ভেতরে খাট আছে, তোশক নেই। টিভি, ফ্রিজ, টেবিল ফ্যান গুলো নষ্ট হয়ে গেছে। বিশাল পরিবর্তন মেনে নিতেই কষ্ট হচ্ছে তাদের। এখানকার মানুষ ধ্বংসস্তূপের উপর দাঁড়িয়ে আবার ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছে।
জানা যায়, এবারের বন্যায় জেলার ১৪ উপজেলার নিন্মঅঞ্চলের ঘরে চালা পর্যন্ত পানি উঠায় তাদের ঘরে থাকা আসবাবপত্র, কাথা-বালিশ, গৃহস্থালিসহ সকল প্রকার মালামাল সম্পূর্ণ নষ্ট হয়ে গেছে। কোথাও কোথাও পানি কমলেও এখন আর সে কর্দমাক্ত ভেজা ঘরে বসবাস কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছে। এমনকি মানুষের গোলায় রাখা ধান চাল ডাল পানিতে ভেসে গেছে। রান্নাঘরের চুলা, এমনকি লাড়কি কিছুই আর অবশিষ্ট নেই। বসবাসের অনুপযোগী দেখে মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছেন ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলো
সরেজমিনে দেখা যায়, বন্যার পানি নেমে যাওযার সাথে সাথে জেলার বুড়িচং, ব্রাক্ষণপাড়া, চৌদ্দগ্রাম, মনোহরগঞ্জ, লাকসাম ও নাঙ্গলকোট উপজেলায় ভেজা ও নষ্ট হওযা আসবাবপত্রাদি, দুর্গন্ধময় পরিবেশ তছনছ। সাজানো গুছানো সংসার-এমন বিপর্যয়ে এখন বেঁচে থাকাই দায়। এসব বিষয জরুরীভাবে ব্যবস্থা না হলে এখানে মানবিক বিপর্যয় আরো গুরুতর হবে। বন্যা কবলিত এলাকার মানুষ জানান, গোমতীর বাঁধ ভেঙ্গে বন্যা মাত্র কয়েক ঘন্টার ব্যবধানে প্রবল বেগে লোকালয়ে পানি ঢুকে। মানুষজন তাদের বাড়িঘর, আসবাবপত্র, ধান-চাল-ডাল, গৃহস্থলীর দ্রব্যাদী রেখে কোনরকমে বিভিন্ন আশ্রয় কেন্দ্রের দিকে দৌড়ে বা কলা গাছের ভেলা বানিয়ে প্রাণে রক্ষা পান। কিন্তু পানি নামার সাথে সাথে তাদের সেই ধ্বংসস্তূপে এসে দেখেন কিছুই আর অবশিষ্ট নেই। পোষা বিড়াল বা কুকুরটিও আর নেই। তাদের সাজানো গোছানো ঘর-সংসার সবকিছুই বানের পানি ভাসিয়ে নিয়ে গেছে। চৌদ্দগ্রাম উপজেলার কনকাপৈত ইউনিয়নের দুর্গাপুর গ্রামের বাসিন্দা রহিমা আক্তার বাসসকে বলেন, বাড়ি ফিরেছি এসেই দেখি, আমাদের সব শেষ। কোনো কিছুই অবশিষ্ট নেই। ক্ষতিগ্রস্ত ঘর দেখে আমি আঁতকে উঠেছি। রান্না করার চুলাও ভাসিয়ে নিয়ে গেছে পানি। এতদিন তো মানুষের ত্রাণে চলেছি। এখন কীভাবে চলব? জীবনের শেষ সম্বলটুকু হারিয়ে রাস্তায় বসা ছাড়া আর কোনো উপায় দেখতেছি না। বুড়িচংয়ের ইন্দ্রাবতি গ্রামের ধীরেন্দ্র চন্দ্র দাস বলেন, হঠাৎ বাঁধ ভেঙে লোকালয়ে পানি ঢুকতে শুরু করে। জীবনেও এতো পানি দেখিনি। প্রাণ বাঁচাতে কোনো রকমে পরনের কাপড় নিয়েই ঘর ছাড়ি। পানি কমার পর বাড়ি এসে দেখি আমার কিছুই নেই। সব পানি নিয়ে গেছে। কেবল আমরাই বেঁচে আসছি। আমি তো একেবারে নিঃস্ব হইয়া গেছি। ধীরেন্দ্র চন্দ্র দাসের ভাষ্য, ঘর, আসবাবপত্র সব ভাসিয়ে নিয়ে গেছে পানি। ঘরে যা ছিল তা ক’য়েক দিনের পানির নিচে থেকে সব পচে গেছে। পানি তো কমে গেছে, আমার যে ক্ষতি, তা তো কোনোভাবে পূরণ হওয়ার নয়। একই উপজেলার আনোয়ার হোসেন বাসসকে বলেন, বন্যার পানি নেমে যাওয়ার পর ঘরে ফিরে দেখেন ধ্বংসস্তূপে পরিণিতি হয়েছে ঘরের ভিতরে থাকা খাট, তোশক, বালিশ, খাবার টেবিল, চেয়ারসহ অন্যান্য আসবাবপত্র ব্যবহারের অযোগ্য হয়ে গেছে। শুধু ধীরেন্দ্র চন্দ্র কিংবা আনোয়ার হোসেনই নয়, গোমতীর ভাঙনের ফলে জেলার বুড়িচং ও ব্রাহ্মণপাড়াসহ অন্যান্য উপজেলার অসংখ্য মানুষ এখন ঘরহারা হয়ে হাহাকার করছেন। আর যাদের ঘর টিকে আছে, তাদের ঘরের ভিতরে থাকা সব আসবাবপত্র নষ্ট হয়ে গেছে। নাঙ্গলকোটের আলেয়া আক্তারের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, বানের তোড়ে তার ঘরটিও ভেঙে পড়েছে। ঘরের ভেতরের সব আসবাবপত্র নষ্ট হয়ে গেছে। বন্যার এ ক্ষতচিহ্ন দেখে কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি। কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি বলেন, দীর্ঘদিন পানির নিচে থাকার পর ঘরের মালামাল নষ্ট হয়ে এ বন্যায় আমার সব শেষ হইয়া গেল। এ পানি আমার সব কাইড়া নিসে।
জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা মো. আবেদ আলী বাসসকে বলেন, গোমতী নদীর ভাঙনের সম্মুখে থাকা পরিবারগুলো বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তাদের দিকে বিশেষ নজর দিতে হবে। পুনর্বাসন করতে হবে দ্রুত। যেহেতু এ এলাকার মানুষের একসময় সবই ছিল এখন তারা অনেকেই নিঃস্ব। তাই তাদের মনোবলও ভেঙে পড়েছে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here