দেশের স্বার্থ ও সব দেশের সঙ্গে ভারসাম্যপূর্ণ সম্পর্ককে অগ্রাধিকার দিয়ে পথচলা শুরু

নিউজ ডেস্ক

সবার আগে সব খবর

প্রকাশিত : ১০:৪১ এএম, ৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪ রোববার

দেশের স্বার্থ ও সব দেশের সঙ্গে ভারসাম্যপূর্ণ সম্পর্ককে অগ্রাধিকার দিয়ে পথচলা শুরু

দেশের স্বার্থ ও সব দেশের সঙ্গে ভারসাম্যপূর্ণ সম্পর্ককে অগ্রাধিকার দিয়ে পথচলা শুরু

অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পরপরই দেশের স্বার্থ ও সব দেশের সঙ্গে ভারসাম্যপূর্ণ সম্পর্ককে অগ্রাধিকার দিয়ে কূটনীতি সাজাতে শুরু করেছে। জানা গেছে, দেশ-বিদেশে সমানতালে কাজের মাধ্যমে নিজেদের দৃষ্টিভঙ্গির জানান দিতে চায় নতুন সরকার। প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূসের যে ইতিবাচক ইমেজ ও গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে বিশ্বব্যাপী, তাও কাজে লাগাতে চায়। ইতোমধ্যে পররাষ্ট্র বিষয়ক উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেনকে তার ইমেজ ব্যবহারের বার্তাও দিয়েছেন ড. ইউনূস।

অন্তর্বর্তী সরকার আসার পর অল্প সময়ের মধ্যেই কূটনীতিতে বড় ধরনের সফলতা পেয়েছে বাংলাদেশ। ড. ইউনূসের ইমেজের কারণে এত বড় সফলতা এসেছে। সংযুক্ত আরব আমিরাতে সাজাপ্রাপ্ত ৫৭ বাংলাদেশিকে ক্ষমা করে দিয়েছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট শেখ মোহাম্মদ বিন জায়েদ আল নাহিয়ান। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের প্রতি সম্মান দেখিয়েই প্রেসিডেন্ট নাহিয়ান এ ক্ষমা ঘোষণা করেন। গত ২৮ আগস্ট আরব-আমিরাতের প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ বিন জাহেদ আল নাহিয়ানের সঙ্গে ফোনালাপে প্রধান উপদেষ্টা এই ৫৭ জনকে ক্ষমা করে দেওয়ার অনুরোধ করেছিলেন। এর প্রেক্ষিতে সে দেশের প্রেসিডেন্ট তাদের ক্ষমার ঘোষণা দেন। সাজাপ্রাপ্ত আসামিদের ক্ষমা করা সংযুক্ত আরব আমিরাতের ইতিহাসে বিরল।

কূটনৈতিক সূত্রে জানা গেছে, পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন দায়িত্ব নেওয়ার পর পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র কর্মকর্তা এবং দেশের বাইরে বাংলাদেশ মিশনগুলোতে কর্মরত রাষ্ট্রদূত এবং হাইকমিশনারদের সঙ্গে গত আগস্টে বৈঠক করেন। বৈঠকে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা ঢাকার কূটনীতিকদের বলেন, এ সময়ে আমাদের অধিকতর তৎপরতার সঙ্গে কাজ করতে হবে। আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা বড় ধরনের পরিবর্তন প্রত্যাশী। সেই অনুযায়ী রাষ্ট্র মেরামত করতে হবে। এখানে আন্তর্জাতিক পরিসরে আমরা যা করতে পারি, তার মধ্যে একটা হচ্ছে রাজনৈতিক পরিসরে বিষয়টি ডিফেন্ড করা, সুবিধা নেওয়া, ক্ষেত্রবিশেষে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে যেসব সমস্যার সৃষ্টি হবে সেগুলোর সমাধান করা। এ ক্ষেত্রে আমরা প্রধান উপদেষ্টার ফেসভ্যালু ব্যবহার করতে পারব। প্রধান উপদেষ্টা আমাকে বলেছেন, দেশের প্রয়োজনে কূটনীতিকরা তার ফেসভ্যালু ব্যবহার করতে পারবেন। প্রধান উপদেষ্টার ফেসভ্যালু ব্যবহার করলে আমরা অনেক ক্ষেত্রেই বাড়তি সুবিধা আদায় করতে পারব।

পররাষ্ট্র উপদেষ্টা ভারত, চীন ও যুক্তরাষ্ট্রসহ সব দেশের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক চান বলে জানিয়েছেন। সাংবাদিকদের তিনি বলেন, আমাদের সবার সঙ্গে ভারসাম্য বজায় রাখতে হবে। ভারত, চীন ও যুক্তরাষ্ট্রসহ সব দেশের সঙ্গেই আমরা ভালো সম্পর্ক চাই। এক প্রশ্নের উত্তরে তৌহিদ হোসেন বলেন, ভারতের সঙ্গে আমাদের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল। বিভিন্ন সময়ে সোনালি অধ্যায় বলা হয়েছে। তবে মানুষ যেন মনে করে, সত্যিকারভাবে দুই দেশের মধ্যে সোনালি অধ্যায় তৈরি হয়েছে। আমরা সবসময় আমাদের স্বার্থ দেখব, প্রতিবেশীর স্বার্থও দেখব।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র বলছে, প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বিশ্ব জুড়ে খ্যাতি রয়েছে। বিশ্বের প্রায় সব প্রান্তেই তার সুনাম রয়েছে এবং তার ভাবমূর্তি খুব উজ্জ্বল। ড. ইউনূসের ভাবমূর্তি কূটনীতিকরা ব্যবহার করতে পারলে দেশের অনেক উপকার হবে। বিশ্বের সাতজন ব্যক্তি নোবেল শান্তি পুরস্কার, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্সিয়াল মেডেল অব ফ্রিডম এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেশনাল গোল্ড মেডেল পেয়েছেন। তিনি সেই সাতজন ব্যক্তির মধ্যে একমাত্র বাংলাদেশি। ড. ইউনূসের দেখানো পথেই যুক্তরাষ্ট্রের সুবিধাবঞ্চিত নারীদের জন্য কাজ করছে গ্রামীণ আমেরিকা। তার দর্শনের ভিত্তিতে ৪০০ কোটি ইউরো ব্যয়ে প্যারিস ২০২৪ অলিম্পিক ভিলেজ তৈরি হয়। এর আগে ব্রাজিলের রিও অলিম্পিকেও তার সরব উপস্থিতি ছিল। ড. ইউনূসের দেখানো পথে দারিদ্র্য দূরীকরণে ক্ষুদ্রঋণ বা সামাজিক ব্যবসার মডেল বিশ্বের ৪০টির বেশি দেশে ১৩০টির বেশি প্রতিষ্ঠান ধারণ করে চলছে। এ ছাড়া পৃথিবীর ৮০টির বেশি বিশ্ববিদ্যালয়-কলেজে তার নামে ‘ইউনূস সোশ্যাল বিজনেস সেন্টার’ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, যেখানে ড. ইউনূসের চিন্তা, কাজ, ভবিষ্যৎ লক্ষ্য ও তার জীবনাদর্শ নিয়ে গবেষণা হয়। এ পর্যন্ত ২৪টি দেশের খ্যাতনামা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিনি ৬০টির মতো সম্মানসূচক ডিগ্রি পেয়েছেন। ১৩০টির বেশি সম্মাননা পেয়েছেন ৩০টির বেশি দেশ থেকে। তা ছাড়া কানাডা ও জাপানের মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের পাঠ্যপুস্তকে ড. ইউনূসের জীবনী অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।