বন্যাদুর্গত কৃষকদের সাহায্যার্থে নোবিপ্রবিতে ৪৫০ কেজি ধানের বীজ বপন

নিউজ ডেস্ক

সবার আগে সব খবর

প্রকাশিত : ১১:০৪ এএম, ৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪ রোববার

বন্যাদুর্গত কৃষকদের সাহায্যার্থে নোবিপ্রবিতে ৪৫০ কেজি ধানের বীজ বপন

বন্যাদুর্গত কৃষকদের সাহায্যার্থে নোবিপ্রবিতে ৪৫০ কেজি ধানের বীজ বপন

দেশের দক্ষিণ ও পূর্বাঞ্চলের আকস্মিক বন্যায় কৃষি ও কৃষকের ক্ষতি হয়েছে অপরিসীম। বন্যা পরবর্তী পরিস্থিতি মোকাবিলায় এবং কৃষকের ক্ষতি পুষিয়ে দিতে এগিয়ে এসেছেন নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (নোবিপ্রবি) কৃষি বিভাগের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।বন্যা পরবর্তী খাদ্য সংকট মোকাবিলায় ‘লেইট আমন’ প্রকল্পের অংশ হিসেবে বিনামূল্যে বিনা আমন ধানের চারা বিতরণের উদ্যোগ নিয়েছেন তারা। এ উদ্যোগের অংশ হিসেবে নোবিপ্রবিতে ৪৫০ কেজি বিনা-১৭ এবং ব্রি-৭৫ ধানের বীজ বপন করা হয়েছে। যা ১২৬ বিঘা জমিতে ধানের চারা রোপণ করা যাবে। এরপর কৃষকদের মধ্যে সবজির চারা বিতরণ করা হবে।শনিবার (৭ সেপ্টেম্বর) বীজ বপনের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন কৃষি বিভাগের সাবেক শিক্ষার্থী শাকিল আহমেদ শুভ।

জানা যায়, অতিবৃষ্টি ও ভারতের ত্রিপুরা থেকে নেমে আসা ঢলে তলিয়ে গেছে দেশের ১১ জেলা। স্মরণকালের এ বন্যায় এখনো পানিবন্দি লাখো মানুষ। মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে কৃষিখাত। আমনের বীজতলা ও চারা সব নষ্ট হয়ে যাওয়ায় বড় ধরনের খাদ্য সংকটের শঙ্কায় রয়েছেন বানভাসিরা।

খাদ্য ঘাটতি কাটিয়ে উঠতে সাম্প্রতিক কৃষকদের বিনামূল্যে ধানের চারা বিতরণের জন্য ‘অ্যাগ্রি স্টুডেন্ট’স অ্যালায়েন্স বিডি’ এগিয়ে আসে। বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, হাজী দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক এবং শিক্ষার্থী, বিভিন্ন এলাকার কৃষি উদ্যোক্তা, বীজ কোম্পানি এবং কর্পোরেট ব্যক্তিদের নিয়ে গঠিত সংগঠন ‘অ্যাগ্রি স্টুডেন্ট’স অ্যালায়েন্স বিডি’। এই উদ্যোগ বাস্তবায়নে ‘কৃষিবিদ ফাউন্ডেশন ফর হিউম্যানিটি’র আর্থিক সহযোগিতায় বন্যার্ত কৃষকদের মধ্যে ধানের চারা ও কৃষি উপকরণ সরবরাহ করা হচ্ছে। এ পর্যন্ত তারা ২ লাখ টাকা অধিক আর্থিক সহযোগিতা প্রদান করেছে। এছাড়াও নোবিপ্রবিতে চারা উৎপাদন সংশ্লিষ্ট খরচ বহন করছেন বিভাগটির শিক্ষক এবং সাবেক শিক্ষার্থীরাসহ এগ্রিভেঞ্চার লিমিটেড। 

বীজ বপনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট নোবিপ্রবির সাবেক শিক্ষার্থী শাকিল আহমেদ শুভ জানান, 'বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে ৫ একর, নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ১ একর, চট্টগ্রামের হাট হাজারিতে ৪ একর ও লক্ষ্মীপুরে ২ একরসহ মোট ১২ একর জমিতে বিনা আমন ধানের চারা উৎপাদনের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। উৎপাদিত চারাগুলো বন্যাকবলিত কৃষকদের মধ্যে বিতরণ করা হবে। 

তিনি আরো জানান, এই উদ্যোগের পাশাপাশি বন্যাকবলিত কৃষকদের পাশে দাঁড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছে নোবিপ্রবি কৃষি বিভাগ। এর অংশ হিসেবে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের মধ্যে সবজির চারা, ধানের চারা এবং রিসার্চ ফিল্ডের ২ একর জমিতে উৎপাদিত ‘লেইট আমন’ ধানের চারা বিনামূল্যে বিতরণ করা হবে। উৎপাদিত চারা দিয়ে প্রায় ১২৬ বিঘা জমিতে আমন ধানের চারা রোপণ করা সম্ভব হবে।’
 
বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মো. কাওসার হোসেন বলেন, ‘আকস্মিক বন্যায় ডুবে নষ্ট হয়েছে রোপা আমন ধানের চারা এবং বীজতলা। কিছুদিন পর বন্যার পানি নেমে গেলেও চারা তৈরি করতে অন্তত এক মাসের মতো সময় লাগবে। এতে আমন ধান লাগানোর সময় পার হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। আবার বন্যার কারণে চারা তৈরি করতে না পারলে দেশে খাদ্য সংকট দেখা দেবে। তাই খাদ্য সংকটের কথা মাথায় রেখে আমাদের শিক্ষার্থীরা বন্যা পরবর্তী ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের ধানের চারা দিয়ে সহায়তা করার উদ্যোগ নিয়েছে। পরবর্তীতে আমরা সবজির বীজ বিতরণ করবো।’

তিনি আরো বলেন, নোবিপ্রবি কৃষি বিভাগের শিক্ষক -শিক্ষার্থীরা এই এগিয়ে এসেছে। এজন্যে আমরা যে যার অবস্থান থেকে সাহায্য করেছি। চারা রোপণের পর সার, কীটনাশক এবং সবজি বীজ দেওয়ার বিষয়ে আমরা চিন্তা করেছি। শিক্ষার্থীদের সর্বাত্মক সহায়তায় আমরা সব সময় পাশে থাকব।’
 
প্রসঙ্গত, এই সংকট মোকাবিলায় নোবিপ্রবি কৃষি বিভাগের সব শিক্ষক, প্রাক্তন শিক্ষার্থী এবং বর্তমান শিক্ষার্থীদের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় কৃষকদের পাশে দাঁড়ানোর কাজ করছে।