ব্যবহারযোগ্য রিজার্ভ ১৬.৭৭ বিলিয়ন ডলার : কেন্দ্রীয় ব্যাংক

নিউজ ডেস্ক

সবার আগে সব খবর

প্রকাশিত : ১০:৩১ এএম, ৩ জুলাই ২০২৪ বুধবার

ব্যবহারযোগ্য রিজার্ভ ১৬.৭৭ বিলিয়ন ডলার : কেন্দ্রীয় ব্যাংক

ব্যবহারযোগ্য রিজার্ভ ১৬.৭৭ বিলিয়ন ডলার : কেন্দ্রীয় ব্যাংক

চলতি বছরের জুন শেষে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার নিট রিজার্ভ ১৬ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এই রিজার্ভ আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি। অর্থাৎ আইএমএফের ৪৭০ কোটি ডলার ঋণ কর্মসূচির আওতায় নিট রিজার্ভ রাখার যে লক্ষ্যমাত্রা ছিল, এবারই সেই লক্ষ্যপূরণ করা সম্ভব হয়েছে। এর আগে টানা চার ত্রৈমাসিকে নিট রিজার্ভের লক্ষ্যপূরণ করতে পারেনি বাংলাদেশ। এদিকে, বিদায়ী অর্থবছরে রিজার্ভ থেকে ১ হাজার ২৬৯ কোটি ডলার বিক্রি করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

নিট রিজার্ভ হলো দায়হীন রিজার্ভ। আইএমএফের এসডিআর খাত, ব্যাংকগুলোর বৈদেশিক মুদ্রা ক্লিয়ারিং হিসাবে রাখা ডলার ও এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নের (আকু) বিলের জন্য জমা থাকা ডলার বাদ দিয়ে যে হিসাব করা হয়, সেটিই হলো নিট রিজার্ভ। তবে বাংলাদেশ ব্যাংক রিজার্ভের নিট হিসাব প্রকাশ করে না। আইএমএফসহ বিভিন্ন সংস্থাকে এ তথ্য সরবরাহ করে থাকে।

সংশ্লিষ্টরা জানান, ৪৭০ কোটি ডলার ঋণের শর্ত হিসাবে বাংলাদেশকে নির্দিষ্ট সময় পরপর কী পরিমাণ নিট রিজার্ভ রাখতে হবে, তাও ঠিক করে দিয়েছিল আইএমএফ। সে অনুযায়ী, প্রতি তিন মাস পরপর আইএমএফের শর্ত মেনে রিজার্ভ সংরক্ষণ করতে হচ্ছে।

সংস্থাটির শর্তানুযায়ী, চলতি বছরের জুন শেষে বাংলাদেশকে নিট রিজার্ভ ২ হাজার ১০ কোটি ডলার রাখতে বলা হয়েছিল। পরে বাংলাদেশের অনুরোধে তা কমিয়ে ১ হাজার ৪৭৮ কোটি ডলারের লক্ষ্য দেওয়া হয়। বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী, গত ৩০ জুন শেষে গ্রস রিজার্ভ বেড়ে হয় ২ হাজার ৬৮১ কোটি ডলার। একই দিন বিবিএম-৬ অনুযায়ী, গ্রস রিজার্ভ বেড়ে হয়েছে প্রায় ২ হাজার ১৮৩ বিলিয়ন ডলার। আর নিট বা দায়হীন রিজার্ভ দাঁড়ায় প্রায় ১ হাজার ৬৭৭ কোটি ডলার। এই রিজার্ভ দিয়ে অন্তত তিন মাসের সমান আমদানি দায় মেটানো সম্ভব বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা।

এদিকে গতকাল দিনশেষে বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাবে গ্রস রিজার্ভ বেড়ে হয়েছে ২ হাজার ৬৮৮ কোটি ডলার। তবে বিপিএম-৬ অনুযায়ী গ্রস ও নিট রিজার্ভ কত ছিল সেটি জানা যায়নি।

বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র মো. মেজবাউল হক জানান, গত বৃহস্পতিবার আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ঋণের তৃতীয় কিস্তির ১১৫ কোটি ডলার পেয়েছে বাংলাদেশ, যা ওই দিনই বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে যোগ হয়। একই দিন এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি), বিশ্বব্যাংক গ্রুপের প্রতিষ্ঠান ইন্টারন্যাশনাল ব্যাংক ফর রিকনস্ট্রাকশন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট এবং কোরিয়া থেকে আসা প্রায় ৯০ কোটি ডলারও রিজার্ভে যোগ হয়। এর বাইরে প্রবাসীদের পাঠানো ফলে বাংলাদেশের মোট রিজার্ভ বৃদ্ধির পাশাপাশি নিট রিজার্ভও বেড়েছে।

বিদেশি মুদ্রা সংকটের মধ্যে ২০২২ সালের জুলাইয়ে আইএমএফের কাছে ঋণের আবেদন করে বাংলাদেশ। ওই আবেদনের ছয় মাস পর গত বছরের ৩০ জানুয়ারি ৩৮টি শর্তে ৪৭০ কোটি ডলারের ঋণ অনুমোদন করে আইএমএফ। বর্ধিত ঋণসহায়তা (ইসিএফ), বর্ধিত তহবিল সহায়তা (ইএফএফ) ও রেজিলিয়েন্স অ্যান্ড সাসটেইনেবিলিটি ফ্যাসিলিটি (আরএসএফ)-এই তিন আলাদা কর্মসূচির আওতায় ওই ঋণ অনুমোদন করে আইএমএফ। ঋণ অনুমোদনের সময় দাতা সংস্থাটি জানায়, শর্তপূরণ সাপেক্ষে ২০২৬ সাল পর্যন্ত মোট সাত কিস্তিতে ঋণের এ অর্থ দেওয়া হবে। এরই মধ্যে তিনটি কিস্তি পাওয়া গেছে। এর মধ্যে প্রথম কিস্তি হিসেবে ৪৭ কোটি ৬৩ লাখ ডলার পাওয়া যায় গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে। একই বছরের ডিসেম্বরে দ্বিতীয় কিস্তির ৬৮ কোটি ১০ লাখ ডলার পাওয়া যায়। আর তৃতীয় কিস্তির ১১৫ কোটি ডলার পাওয়া গেছে গত বৃহস্পতিবার। সব মিলিয়ে তিন কিস্তিতে আইএমএফের কাছ থেকে প্রায় ২৩১ কোটি ডলার পেয়েছে বাংলাদেশ। ঋণের বাকি প্রায় ২৩৯ কোটি ডলার আর চার কিস্তিতে পাওয়া যাবে।

আইএমএফের সংশোধিত শর্তানুযায়ী, আগামী সেপ্টেম্বর শেষে দেশের নিট রিজার্ভ ১৪ দশমিক ৮৮ ও ডিসেম্বর শেষে তা ১৫ দশমিক ৩০ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত করতে হবে।

রিজার্ভ থেকে ১২.৬৯ বিলিয়ন ডলার বিক্রি : সদ্য বিদায়ী ২০২৩-২৪ অর্থবছরে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ থেকে ১ হাজার ২৬৯ কোটি ডলার (১২ দশমিক ৬৯ বিলিয়ন) বিক্রি করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। আগের অর্থবছরে বিক্রির পরিমাণ ছিল আরও বেশি, প্রায় ১ হাজার ৩৫৮ কোটি ডলার (১৩ দশমিক ৫৮ বিলিয়ন)।

বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা জানান, ডলার সংকট থাকার কারণে ব্যাংকগুলো চাহিদামতো ঋণপত্র খুলতে পারছে না। তাই নিয়মিত রিজার্ভ থেকে ডলার সরবরাহ করতে হচ্ছে। তবে রেমিট্যান্স ও রপ্তানি আয়ে গতি আসায় রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রির চাপ কমে এসেছে।

জানা যায়, বিদেশের সঙ্গে সামগ্রিক লেনদেন ভারসাম্যে ঘাটতি বেড়ে গত অর্থবছরের এপ্রিল পর্যন্ত ১০ মাসে ৪৭৫ কোটি ডলার হয়েছে। আগের অর্থবছরের একই সময়ে ঘাটতি ছিল ৮৪৮ কোটি ডলার। এ অবস্থায় কোনো ব্যাংক যেন আমদানি দায় পরিশোধে ব্যর্থ না হয়, সেজন্য রিজার্ভ কমলেও ডলার বিক্রি করে যাচ্ছিল কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এতে করে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমে যায়।

তবে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) তৃতীয় কিস্তিসহ বিভিন্ন দাতাগৌষ্ঠী থেকে ঋণ পাওয়ার পাশাপাশি রেমিট্যান্সে গতি ফেরায় আবারও রিজার্ভ বেড়েছে। গত ৩০ জুন শেষে বাংলাদেশ ব্যাংকের নিজস্ব হিসাবে রিজার্ভ ছিল ২৬ দশমিক ৮১ বিলিয়ন ডলার। আর আইএমএফের হিসাবপদ্ধতি বিপিএম-৬ অনুযায়ী ৩০ জুন পর্যন্ত গ্রস রিজার্ভ ছিল ২১ দশমিক ৮৩ বিলিয়ন, যা ২৬ জুন ছিল ১৯ দশমিক ৪৭ বিলিয়ন। নিট রিজার্ভ ৩০ জুন ছিল ১৬ দশমিক ০৩ বিলিয়ন, যা এতদিন ১৪ বিলিয়ন ডলারের আশপাশে ছিল।