ঢাকা, সোমবার   ০৮ জুলাই ২০২৪ ||  আষাঢ় ২৪ ১৪৩১

অনিয়ম-দুর্নীতির বিরুদ্ধে সোচ্চার থেকে দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে

নিউজ ডেস্ক

প্রকাশিত: ১৪:৫১, ৫ জুলাই ২০২৪  

অনিয়ম-দুর্নীতির বিরুদ্ধে সোচ্চার থেকে দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে

অনিয়ম-দুর্নীতির বিরুদ্ধে সোচ্চার থেকে দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে

অনিয়ম-দুর্নীতির বিরুদ্ধে সোচ্চার থেকে দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে। সর্বত্র দুর্নীতি রোধ করতে যা প্রয়োজন, সব উপায় ব্যবহার করতে হবে। আরও সক্রিয় হতে হবে অনিয়ম ও দুর্নীতি প্রতিরোধী প্রতিষ্ঠান ও সংস্থাগুলোকে। মানুষের কোনো অভিযোগ থাকলে সেটা যেন গুরুত্ব সহকারে নিয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। গতকাল বৃহস্পতিবার সচিবদের সভায় এমন কঠোর বার্তা দেওয়া হয়েছে। সভায় অংশ নেওয়া একাধিক মন্ত্রণালয়ের সচিবের সঙ্গে কথা বলে এমন তথ্য পাওয়া গেছে।

সচিবালয়ের ৬ নম্বর ভবনে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত হয় সচিব সভা। বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে শুরু হয়ে শেষ হয় সন্ধ্যা ৬টা ৪৫ মিনিটে। সভায় সভাপতিত্ব করেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. মাহবুব হোসেন।

সভা শেষে মন্ত্রিপরিষদ সচিব সাংবাদিকদের বলেন, অনিয়ম-দুর্নীতি হ্রাসের লক্ষ্যে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগ এবং এর অধস্তন অফিসগুলোয় নিবিঘেœ সেবা প্রদান করা হয়। দপ্তরগুলোয় কার্যক্রমে জোরালো মনিটরিংয়ের কথা বলা হয়েছে। ১৯৭৯ সালের সরকারি কর্মচারী আচরণ বিধিমালা দ্রুত যুগোপযোগী করে নতুন বিধিমালা চূড়ান্ত করা হচ্ছে বলেও জানিয়েছেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব। একই সঙ্গে ২০১২ সালের শুদ্ধাচার নীতিমালাটি হালনাগাদ করার কথা জানান তিনি।

ছয় মাসের মধ্যেই কেন দ্বিতীয় সচিব সভা- এ প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী যখন প্রথম সচিব সভা (গত ৫ ফেব্রুয়ারি) করেন, তখন আমাদের কাছে একটি নির্দেশনা এসেছিল, আমরা যেন বছরে অন্তত দুটি সচিব সভা করি।’ তিনি বলেন, ‘আজকের মিটিংয়ে মূলত গত সভার বাস্তবায়ন অগ্রগতিটা আমরা আলোচনা করেছি, আমরা শুদ্ধাচার বিষয়ে কিছু আলোচনা করেছি, আমরা বাজেট বাস্তবায়ন নিয়ে আলোচনা করেছি এবং নির্বাচনী ইশতেহার নিয়ে আলোচনা করেছি। এ ছাড়া দাপ্তরিক কাজে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সময়ে সময়ে যে নির্দেশনাগুলো দিয়েছিলেন সেগুলো যত্ন সহকারে সিরিয়াসলি অনুসরণ করার ব্যাপারে তাদের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। সাধারণত আমরা যেটা করে থাকি, বাজেট বাস্তবায়নের স্বচ্ছতার কথা বলেছি।’

সভায় বিশেষ কোনো নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে কিনা? শুদ্ধাচার বিষয়ে কোনো আলোচনা হয়েছে কিনা, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমরা এটা আলোচনা করেছি। আমাদের যে শুদ্ধাচার

নীতিমালাটি আছে, সেটি প্রায় ১২ বছর হয়ে গেছে। এটি এখন আমরা আপডেট করার চিন্তা-ভাবনা করছি। সেই প্রসঙ্গটা আলোচনা হয়েছে। আলোচনা হয়েছে যে, আমাদের একটা আচরণবিধি ছিল ১৯৭৯ সালের, সেটিকে আপডেট করার কার্যক্রম চলছিল, সেটির অগ্রগতি কী, সেটি আমরা জেনেছি। আমরা আশা করছি দ্রুত সেটি চূড়ান্ত হয়ে যাবে।’

সম্প্রতি কয়েকজন সরকারি কর্মকর্তা বা সাবেক কর্মকর্তার দুর্নীতি সামনে এসেছে, সরকারি কর্মকর্তাদের দুর্নীতি নিয়ে কোনো আলোচনা হয়েছে কিনা- এ বিষয়ে জানতে চাইলে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ‘না, স্পেসিফিক কিছু আলোচনা করিনি। এত সচিব নিয়ে তো আমরা এই জাতীয় বিষয় নিয়ে আলোচনা করব না।’ তিনি বলেন, আমরা একজন-দুজনের অপকর্ম নিয়ে, কোনো একটা অভিযোগ নিয়ে তো এত সচিব ডেকে এনে আলোচনা করব না। এটা তো খুব স্বাভাবিক বিষয়। সরকারি কর্মকর্তাদের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয়, এ ধরনের কোনো আলোচনা নয়। এ রকম কোনো আলোচনা হয়নি।’

জানা গেছে, একজন কর কমিশনার, পুলিশের সাবেক আইজিপিসহ বিভিন্ন দপ্তরের কয়েকজন কর্মকর্তা-কর্মচারীর দুর্নীতির খবরে বিব্রত সরকার ও প্রশাসন। গত শনিবার জাতীয় সংসদে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটের ওপর সাধারণ আলোচনায় অংশ নিয়ে দুর্নীতির বিরুদ্ধে সরকারের এমন অবস্থান তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বক্তব্যে বলেন, সরকার দুর্নীতির বিরুদ্ধে অভিযান শুরু করেছে। সে যে-ই হোক, দুর্নীতি করলে কারও রক্ষা নেই। যারাই দুর্নীতি করবে, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। তার বক্তব্যের পর নড়েচড়ে বসছেন প্রশাসন। এতে প্রশাসনে সর্বত্র শুদ্ধাচার ও সুশাসন কীভাবে নিশ্চিত করা যায়, তা মূল আলোচনায় প্রাধান্য পেয়েছে।

সম্প্রতি উচ্চ আদালত সরকারি কর্মচারী বিধিমালা অনুযায়ী সরকারের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সম্পদের হিসাব বিবরণী জমা দেওয়ার নির্দেশ দেন। এই বিধান পরিপালনের নির্দেশ হাইকোর্ট এ বিষয়ে প্রতিবেদন দিতে তিন মাস সময় দেন প্রশাসনকে। সূত্র জানিয়েছে, মূলত উচ্চ আদালতের আদেশের পরিপ্রেক্ষিতে সরকারি কর্মচারী বিধিমালায় পরিবর্তন আনার চিন্তা চলছে। বিধিমালায় প্রতি পাঁচ বছর অন্তর সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সম্পদের হিসাব জমা দেওয়ার নিয়ম রয়েছে।

সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অনিয়ম-দুর্নীতি আলোচনা-সমালোচনার মধ্যে বছরের ছয় মাসে দ্বিতীয় সচিব সভা অনুষ্ঠিত হলো। এটি নতুন সরকার গঠনের সাত মাসের মধ্যে প্রশাসনের শীর্ষ কর্মকর্তাদের বৈঠক।

নতুন সরকার গঠন করার পর প্রথম ওই বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনা ছিল দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি অনুসরণের। গত ৫ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত ওই সচিব সভায় সভাপতিত্ব করেন প্রধামন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত হয়েছিল ওই সভা। সভা শেষে সচিবালয়ে প্রেস ব্রিফিংয়ে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনাগুলো তুলে ধরে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. মাহবুব হোসেন জানিয়েছিলেন, দুর্নীতি প্রতিরোধ, দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ, আইনশৃঙ্খলা রক্ষা, নির্বাচনী ইশতেহার বাস্তবায়ন, যাচাই-বাছাই করে প্রকল্প গ্রহণসহ বিভিন্ন বিষয়ে সচিবদের একগুচ্ছ নির্দেশনা দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

সর্বশেষ
জনপ্রিয়