ঢাকা, মঙ্গলবার   ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ||  আশ্বিন ১ ১৪৩১

কিশোরগঞ্জে আমন ধান চাষে ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষকরা

নিউজ ডেস্ক

প্রকাশিত: ২১:১২, ২৪ আগস্ট ২০২৪  

কিশোরগঞ্জে আমন ধান চাষে ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষকরা

কিশোরগঞ্জে আমন ধান চাষে ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষকরা

কিশোরগঞ্জে আমন ধান রোপণের ব্যস্ত সময় পার করছে কৃষকরা। এরই মধ্যে আমন চাষকে ঘিরে মাঠে মাঠে যেন এখন উৎসব শুরু হয়েছে।এর মধ্য একটানা কয়েকদিনের ভারী বৃষ্টিপাত হওয়ায় বীজ তলা নষ্ট হওয়ার আশংকায় স্থানীয় কৃষকরা এক প্রকার চিন্তিত হয়ে পড়েন। তবে এখন পযর্ন্ত বীজ তলার কোন ক্ষতি হয়নি।

এদিকে গত বোরো মৌসুমে ধানের ফলন ও বিক্রিতে ভালো দাম পাওয়ায় স্থানীয় কৃষকরা খুবই খুশি। তাই তারা আমন ধান আবাদে মাঠে নেমে কাজ করছেন। চলতি মৌসুমে আমন আবাদে জমিতে ফলন ভালো করতে সর্বাত্তক চেষ্টা করবেন বলে জানিয়েছেন কৃষকরা।

স্থানীয় একাধিক কৃষকের সাথে কথা হলে তারা জানায়, এ মৌসুমে আমন ধান আবাদ করতে জ্বালানি তেল, সেচ পানি, তেল, সার, মজুরি, কিটনাশক, জমি নিরানি, ধান কাটা পর্যন্ত প্রতি বিঘাতে তাদের ১৪ হাজার থেকে ১৫ হাজার টাকা লাগবে। যা অন্য সময়ের তুলনায় ৪-৫ হাজার টাকা বেশী ব্যয় হচ্ছে। ফসল বিক্রি করে উৎপাদন খচর তুলতে পারবেন কি না এমন চিন্তা এখন কৃষকদের। তবে যদি ধানের ফলন ভালো ও ন্যায্য মূল্য পাওয়া যায় তাহলে তারা অনেকটাই লাভবান হবেন বলে তারা জানায়।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সুত্রে জানা গেছে, জেলার ১৩ উপজেলা নিয়ে গঠিত কিশোরগঞ্জ জেলার ইটনা, মিঠামইন, অষ্টগ্রাম এবং নিকলী- এই চারটি উপজেলা পুরোপুরি হাওর অধ্যুষিত। এবার জেলায় মোট ৮৩ হাজার ১০০ হেক্টর জমিতে আমন আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এর মধ্যে ৮০% জমিতে ইতিমধ্যে চারা রোপণ সম্পন্ন হয়েছে।

শনিবার (২৪ আগস্ট) সকালে সরেজমিনে জেলার বিভিন্ন স্থানে ঘুরে দেখা যায়, কৃষকরা তাদের জমিতে আমন ধানের চারা লাগানো নিয়ে সকাল থেকে জমি তৈরীতে ব্যস্ত সময় পার করছে। কোথাও কোথাও মাঠ সমান করার জন্য পাওয়ার টিলার দিয়ে চলছে মইয়ের কাজ। কোনো কোনো স্থানে পাওয়ার টিলার ছাড়াও গরুর দিয়ে এমনকি কৃষকরা নিজেই মই টেনে জমি সমান করছে। আবার কোথাও আমন ধান রোপণের জন্য বীজতলা থেকে তোলা হচ্ছে ধানের চারা। অনেককে আবার সেচ দিয়ে আমনের চারা রোপণ করতে হয়েছে।

কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলার যশোদল ইউনিয়নের ভূবিরচর গ্রামের কৃষক মনজিল মিয়া বলেন, চলতি মৌসুমে ৬ বিঘা জমিতে আমন ধান আবাদ করা শুরু করা হয়েছে ইতিমধ্যে ৪ বিঘা জমিতে ধান আবাদ শেষ করেছি। বাকী জমিগুলো আবাদ করতে প্রস্তুতি শেষ করেছি। তিনি আরোও বলেন বর্তমানে এক বিঘা জমিতে ট্রাক্টর দিয়ে চাষ দিতে ৫শ টাকা খরচ লাগছে। সব জিনিসের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় আমাদের চাষা বাদের খরচ কয়েকগুন বেড়ে গেছে। তবে উচ্চ ফলনশীল ধান আবাদে ফলন ভালো ও ধানের ন্যায্য মূল্য পাওয়ায় লাভবান হওয়ার আশা করছেন তিনি।

হোসেনপুর উপজেলার রামপুর গ্রামের কৃষক দুলাল মিয়া বলেন, চলতি মৌসুমে ৫ বিঘা জমিতে আমন ধান আবাদ করতে জমি প্রস্তুত করেছেন। ডিজেল সারসহ অন্যান্যা কৃষি উপকরনের মূল্য বৃদ্ধিতে খরচের পরিমান কয়েকগুন বেড়েছে। তিনি বলেন বর্তমানে এক বিঘা জমিতে ট্রাক্টর দিয়ে চাষ দিতে ৪শ৫০ থেকে ৫শ টাকা খরচ লাগছে। যা ছিল ২শ৫০ থেকে ৩শ টাকা। সব জিনিসের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় আমাদের চাষাবাদের খরচ কয়েকগুন বেড়ে গেছে। সরকারের সহায়তার পাশাপাশি ধানের ন্যায্য মূল্য পাওয়া গেলে অনেকটাই লাভবান হওয়ার আশা করছেন তিনি।

তাড়াইল উপজেলার সেকান্দরনগর গ্রামের কৃষক আজিজুল ইসলাম বলেন, যেভাবে চালের দাম বাড়ে সে অনুযায়ী ধানের দাম বাড়ে না। ধানের দাম বৃদ্ধি পেলে কৃষকরা লাভবান হতো এবং উৎসাহ নিয়ে ধান আবাদের পরিধি বাড়াতো। এবার মৌসুমে ৬ বিঘা জমিতে ধান আবাদ করা হয়েছে। জমিতে আগাছা হয়েছে বেশী। ওইসব পরিস্কার করতে অতিরিক্ত খরচ হচ্ছে। জমি প্রস্তুত করে আবাদ করতে অতিরিক্ত টাকা গুনতে হচ্ছে। যদি ফলন ভালো না হয় তাহলে অনেক লোকশান গুনতে হবে।

বাজিতপুর উপজেলার সরারচর ইউনিয়নের কামালপুর গ্রামের কৃষক বলেন, গত মৌসুমে ১২ বিঘা জমিতে বোরো ধান আবাদ করে ভালো ফলন পেয়েছি। তাই এ মৌসুমে ৮ বিঘা জমিতে আমন ধান আবাদ করতে জমি প্রস্তুত করেছি। তবে জ্বালানি তেল, সার, মজুরি, কিটনাশকসহ কৃষি উপকরনের মূল্যবৃদ্ধিতে ধান আবাদ নিয়ে অনেকেটাই দিশাহারা হয়ে পড়েন তিনি। ইতিমধ্যে ৪ বিঘা জমিতে আমন ধানের চারা লাগানো হয়েছে। তবে শেষ পযর্ন্ত যদি ধানের ন্যায্যমূল্য পাওয়া যায় তাহলে ক্ষতি পুষিয়ে নেওয়া যাবে।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আবুল কালাম আজাদ জানান, কিশোরগঞ্জ জেলার বিভিন্ন উপজেলায় পুরোদমে আমন ধান আবাদ শুরু হয়েছে। সার ও ডিজেলের দাম বৃদ্ধিতে খুব বেশি ক্ষতি হবে না কৃষকরা। তবে আশা করছি মুল্য বৃদ্ধিতে উৎপাদন খরচ বাড়লেও সাথে সাথে কৃষকের উৎপাদিত ফসলের দাম ও বাড়বে। সেইসাথে বৃদ্ধি পাবে তাদের মুনাফাও। তবে সারের ব্যাপারে প্রতিনিয়ত মনিটরিং করা হচ্ছে। শেষ পযর্ন্ত আবহাওয়া অনুকুলে এবং সেচ ব্যবস্থা ঠিকমতো ভাল থাকলে আমনের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের সম্ভাবনা রয়েছে বলে তিনি জানান।

আরও পড়ুন
সারাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত
সর্বশেষ
জনপ্রিয়