ঢাকা, সোমবার   ০১ জুলাই ২০২৪ ||  আষাঢ় ১৬ ১৪৩১

দেশে চামড়া শিল্পের বিপর্যয় রোধে হচ্ছে আইন

নিউজ ডেস্ক

প্রকাশিত: ০৯:৩৮, ২৭ জুন ২০২৪  

দেশে চামড়া শিল্পের বিপর্যয় রোধে হচ্ছে আইন

দেশে চামড়া শিল্পের বিপর্যয় রোধে হচ্ছে আইন

দেশে চামড়ায় তৈরি একজোড়া জুতার দাম ৩ হাজার টাকার ওপরে উঠলেও লাখ টাকায় কেনা পশুর চামড়া ৩০০ টাকাও বিকায় না। চামড়া শিল্পের এ বিপর্যয় রোধে এখন নতুন আইন করতে যাচ্ছে সরকার। প্রস্তাবিত আইনের মাধ্যমে এ শিল্পের বিকাশ, সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা, উন্নয়ন আনুষঙ্গিক বিষয়াদি সম্পর্কে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে। এ সুবিধা নিশ্চিত করতে একজন চেয়ারম্যান ও তিনজন সদস্য নিয়ে গঠন হবে একটি পৃথক কর্তৃপক্ষ। তবে এ কর্তৃপক্ষ চামড়ার মূল্য নির্ধারণে কোনো হস্তক্ষেপ করতে পারবে কি-না আইনের খসড়ায় সে বিষয়টি স্পষ্ট করা হয়নি।

শুধু তাই নয়, প্রস্তাবিত আইনের খসড়ায় কর্তৃপক্ষকে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেওয়ার জন্য শিল্প সচিবকে সভাপতি করে সাত সদস্যের একটি বোর্ড গঠনের কথাও বলা হয়েছে। ওই বোর্ডে বিসিক, বন ও জলবায়ু মন্ত্রণালয়, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব লেদার ইঞ্জিনিয়ারিং টেকনোলজি, ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশন, ফিনিশড লেদার লেদারগুডস অ্যান্ড ফুটওয়্যার এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের প্রতিনিধি অন্তর্ভুক্তির কথা বলা হলেও মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় বা প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের কোনো প্রতিনিধিত্ব রাখা হয়নি। আর্থিক খাতের সংশ্লেষ থাকলেও অর্থ মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধিও নিশ্চিত করা হয়নি।

‘বাংলাদেশ চামড়া শিল্প ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ আইন, ২০-২৪ এর খসড়াটি সম্প্রতি প্রণয়ন করেছে শিল্প মন্ত্রণালয়। মতামত গ্রহণের জন্য গত ১৩ জুন সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে এটি প্রকাশ করা হয়েছে।

এ বিষয়ে শিল্প মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব জাকিয়া সুলতানা বলেন, খসড়া আইনটি প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট সুবিধাভোগীদের মতামত নেওয়া হচ্ছে। এখানে আরও কোনো মন্ত্রণালয় বা সংস্থার সংশ্লেষ থাকলে প্রয়োজনে তাদেরও যুক্ত করা হবে।

প্রস্তাবিত আইনটি কার্যকর হলে বর্তমানে চামড়া শিল্পের ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে থাকা বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প (বিসিক)’র একক দায়িত্ব কমবে। শিল্প মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, চামড়া শিল্প ব্যবস্থাপনার সঙ্গে জড়িত বিসিক। তবে বৃহৎ এই শিল্প ব্যবস্থাপনায় যে পৃথক কর্তৃপক্ষ দরকার তার ভূমিকা বিসিক নিতে পারবে কি না সে বিষয়েও আলোচনা হয়েছে। শেষে সিদ্ধান্ত হয়েছে, চামড়া শিল্পের জন্য শিল্প মন্ত্রণালয়ের অধীন আরেকটি কর্তৃপক্ষ গঠনে আইনি উদ্যোগ নেওয়ার। ওই আইনে কর্তৃপক্ষকে দিকনির্দেশনা দিতে যে বোর্ড থাকবে তাতে বিসিক চেয়ারম্যানকে ১ নম্বর সদস্য করার প্রস্তাব রয়েছে বলেও জানান কর্মকর্তারা।  

সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বিসিক ছাড়াও দেশের সম্ভাবনাময় চামড়া শিল্পের সঙ্গে সরাসরি জড়িত রয়েছে সরকারের ৩টি মন্ত্রণালয়। এর মধ্যে চামড়ার উৎপাদক গবাদিপশুর উন্নয়নে কাজ করছে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের প্রাণিসম্পদ অধিদফতর। কাঁচা চামড়ার বাজারমূল্য এবং সংগ্রহ ও ব্যবস্থাপনার বিষয়গুলো দেখভাল করে থাকে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। আর লবণ দেওয়ার পর চামড়া ব্যবস্থাপনার বিষয়টি দেখভাল করে থাকে শিল্প মন্ত্রণালয়। সরাসরি এ তিন মন্ত্রণালয় ছাড়াও চামড়া প্রক্রিয়াজাকরণের সঙ্গে যেহেতু পরিবেশ দূষণের বিষয়টি রয়েছে- সে কারণে বণ ও পরিবেশ মন্ত্রণালয়ও এ খাতের উন্নয়নের সঙ্গে পরোক্ষভাবে সম্পৃক্ত। খসড়া আইনে বোর্ড গঠনে পরের তিন মন্ত্রণালয়ের অংশগ্রহণ থাকলেও মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের কোনো প্রতিনিধিত্ব নাই।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের মহাপরিচালক ডা. মোহাম্মদ রেয়াজুল হক  বলেন, চামড়ার মূল উৎপাদনকারী আমরা। আমাদের বাদ দিয়ে কোনো আইন করা হলে চামড়া খাতের দুরবস্থা কাটবে না। 

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দেশে তৈরি পোশাকের পর সবচেয়ে সম্ভাবনাময় রপ্তানি খাত হচ্ছে চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য। সঠিক ব্যবস্থাপনার অভাবে সম্ভাবনাময় এ খাতটি এখন ঝুঁকিতে পড়েছে। গবাদিপশুর কাঁচা চামড়া সংগ্রহ থেকে শুরু করে ট্যানারি পর্যন্ত লবণযুক্ত চামড়া পৌঁছানোর ক্ষেত্রে নেই কোনো সুনির্দিষ্ট নীতিমালা। শিল্প মন্ত্রণালয় ২০১৯ সালে চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য উন্নয়ন নীতিমালা করে চট্টগ্রাম ও রাজশাহীতে পৃথক চামড়া শিল্প নগরী স্থাপনের উদ্যোগ নেওয়ার কথা বললেও এর কোনো অগ্রগতি চোখে পড়েনি। রাজধানীর হাজারীবাগ থেকে স্থানান্তর করে সাভারে একটি ট্যানারি শিল্প গড়ে তোলা হলেও কেন্দ্রীয় বর্জ্য ব্যবস্থাপনা পুরোপুরি কার্যকর না থাকায় আন্তর্জাতিক বাজার হারাচ্ছে দেশের চামড়া শিল্প। সাভার শিল্প নগরীর ট্যানারিগুলো চামড়া প্রক্রিয়াকরণের ক্ষেত্রে পরিবেশগত শর্ত ও যথাযথ মান নিশ্চিত করতে না পারায় উৎপাদিত চামড়া আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত এলডব্লিউজি সনদ অর্জন করতে পারছে না। আন্তর্জাতিক সনদ না থাকায় ইউরোপ-আমেরিকার নামি ব্রান্ডগুলো বাংলাদেশের ফিনিশড চামড়া নিচ্ছে না। ফলে বাধ্য হয়ে কম দামে চীনসহ কয়েকটি দেশের কাছে বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন ট্যানারি মালিকরা। এ কারণে গত এক যুগ ধরে দেশে গবাদিপশুর চামড়ার দাম মিলছে না। বাংলাদেশ ট্যানারি অ্যাসোসিয়েশন (বিটিএ)’র সভাপতি শাহীন আহাম্মেদ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, চামড়া শিল্পের দুরবস্থা কাটাতে গত বছর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একটি বোর্ড গঠনের নির্দেশনা দিয়েছিলেন। সেই নির্দেশনার পর শিল্প মন্ত্রণালয় আইনের একটি খসড়া করেছে। তবে এটি আরও বিস্তৃত করে সংশ্লিষ্ট সব মন্ত্রণালয়ের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা দরকার। শুধু প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় নয়, চামড়া খাতের অর্থায়নে ব্যাংক, বীমা খাত জড়িত; সে কারণে অর্থ মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধিও বোর্ডে রাখা দরকার। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো আমাদের জন্য দ্রুত একটি সুনির্দিষ্ট কর্মপরিকল্পনা দরকার। যে কর্মপরিকল্পনা চামড়া খাতের বিপর্যয় রোধ করবে। সেটি না হলে শুধু আইন আর কর্তৃপক্ষ দিয়ে এ বিপর্যয় রোধ করা যাবে না।

সর্বশেষ
জনপ্রিয়