ঢাকা, শুক্রবার   ০৫ জুলাই ২০২৪ ||  আষাঢ় ২০ ১৪৩১

পাবনায় ইছামতির প্রাণ ফেরাতে দেড় হাজার কোটি টাকার প্রকল্প সেনাবাহিনীর

নিউজ ডেস্ক

প্রকাশিত: ২২:০৩, ২ জুলাই ২০২৪  

পাবনায় ইছামতির প্রাণ ফেরাতে দেড় হাজার কোটি টাকার প্রকল্প সেনাবাহিনীর

পাবনায় ইছামতির প্রাণ ফেরাতে দেড় হাজার কোটি টাকার প্রকল্প সেনাবাহিনীর

অবশেষে সব জল্পনা কল্পনার পর সেনাবাহিনীর নিয়ন্ত্রণে পাবনায় ইছামতি নদীর প্রাণ ফেরাতে কাজ শুরু হয়েছে। দখল-দূষণ আর সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের ভুুল সিদ্ধান্তে মৃতপ্রায় পাবনার ইছামতি নদীর যৌবন ফেরাতে নেয়া হয়েছে ১ হাজার ৫৫৪.৯০ কোটি টাকার প্রকল্প। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে প্রকৃতি ও পরিবেশ পুরোপুরি পাল্টে যাবে বলে মনে করছেন নদী পাড়ের মানুষ ও পরিবেশবিদরা।
পাবনার মধ্য শহর দিয়ে প্রবাহিত ইছামতি নদী। পদ্মা যমুনার সংযোগ স্থাপনকারী এ নদীতে এক সময় চলত বড় বড় পালতোলা নৌকা। নদী পথে ব্যবসায়ীরা পণ্য পরিবহন করত। পাওয়া যেত ইলিশসহ বিভিন্ন প্রজাতির মাছ। কিন্তু সেই নদী এখন মৃতপ্রায়। শহরবাসীর দীর্ঘদিনের স্বপ্ন ইছামতির প্রাণ ফেরানোর উদ্যোগ নেন রাষ্ট্রপতি মো: সাহাবুদ্দিন। একনেকে এ প্রকল্পে বরাদ্দ দেয়া হয় ১ হাজার ৫৫৪.৯০ কোটি টাকা।

প্রকল্পের মধ্যে রয়েছে সংযোগ খালসহ প্রায় ১১০ কিলোমিটার নদী খনন, মধ্য শহরে ইছামতি নদীর দুই পাড়ে ১০ কিলোমিটার ড্রেন নির্মাণ, নদীর ওপর ২৩টি সেতু নির্মাণ ও পুনঃনির্মাণ। মধ্য শহরে ১০ কিলোমিটার ওয়াকওয়ে ও নদীতে ৫৬টি ঘাট নির্মাণ এবং বৃক্ষরোপণ।
দখল আর দূষণ দূর করে নদীর প্রাণ ফেরাতে দুই দশক ধরে আন্দোলন করে আসছে সচেতন পাবনাবাসী। নদীটি পুনরুজ্জীবিত করার দীর্ঘ প্রতীক্ষিত প্রকল্প বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে জুনের প্রথম দিকে শুরু হয়েছে; যা পাবনার মানুষের মধ্যে স্বস্তি দিচ্ছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড ১৫৫৪.৯০ কোটি টাকার বাজেটে ‘ইছামতি নদী পুনরুজ্জীবিত’ প্রকল্পের সূচনা করে। পরিচালক শুধাংশু কুমার সরকার বলেন, বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রকৌশল বিভাগের তত্ত্বাবধানে পাবনার সাঁথিয়া উপজেলার মাধপুর এলাকায় ৬ জানুয়ারি ড্রেজিং কার্যক্রম শুরু করা হয়েছে। শুরুর দিকে পাঁচটি ভেকু দিয়ে কাজ শুরু করা হলেও বর্তমান ১০টি ভেকু দিয়ে কাজ করা হচ্ছে বলে কর্মকর্তারা জানান।

তিন বছর মেয়াদি প্রকল্পে ১১০ কিলোমিটার নৌপথ ড্রেজিংয়ের আওতায় জড়িত। এর মধ্যে রয়েছে ৩৩.৭৭২ কিলোমিটার মূল নদীর, ৪৪.০৭২ কিলোমিটার সংযোগকারী খাল, ২০ কিলোমিটার সুতিখালী নদীর এবং ১২.৩৭ কিলোমিটার ভাঁরারা খালের পানিপ্রবাহ পুনরুদ্ধার করার জন্য।
শুধাংশু কুমার সরকার, যিনি পানি উন্নয়ন বোর্ডের পাবনার তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলীও, তিনি আরো বলেন, ‘প্রথমে প্রধান নদী ড্রেজিং করার পর অন্যান্য কাজ শুরু হবে।’
ড্রেজিং ছাড়াও, প্রকল্পের মধ্যে রয়েছে ১০ কিলোমিটার রিটেইনিং ওয়াল নির্মাণ, ১০ কিলোমিটার ড্রেনেজ, ২৩টি নতুন সেতু, নৌকা পার্কিংয়ের জন্য ৫৬টি ঘাট এবং ১০ কিলোমিটার হাঁটার পথ। প্রকল্পটি সৌন্দর্যায়নের জন্য নদীর তীরে ৪২,৩১০টি গাছ লাগানোর পরিকল্পনা রয়েছে। ইতোমধ্যেই মাধপুর-জগনাথপুর এলাকায় ড্রেজিং কাজ শুরু হয়েছে, যা দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলছে বলে এই কর্মকর্তা জানান।

৮২ কিলোমিটার দীর্ঘ ইছামতি নদী, যা পদ্মা নদী থেকে উৎপন্ন হয়ে বেড়া উপজেলার হুরাসাগরে পৌঁছেছে, যেটি পাবনা জেলা সদরের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। যাই হোক, এটি কয়েক দশক ধরে ব্যাপকভাবে দখল এবং দূষণ দ্বারা মারাত্মকভাবে প্রভাবিত হয়েছে।
ইছামতি নদী রক্ষা আন্দোলনের প্রতিষ্ঠাতা এস এম মাহবুবুল আলম বলেন, ‘পাবনার মানুষ তাদের জীবিকার জন্য অপরিহার্য ইছামতি নদীকে রক্ষা করতে সচেষ্ট হয়েছে অনেক আগে।’ তিনি আরো বলেন, আমরা নদীকে পুনরুজ্জীবিত করার জন্য সিএস ম্যাপ অনুযায়ী ইছামতীর যথাযথ ড্রেজিং চাই।’
গত অক্টোবরে একনেক সভায় প্রকল্পটি অনুমোদনের পর কাজটি আর্মি ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের কাছে হস্তান্তর করা হয় বলে জানিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড।
দখলদাররা গত কয়েক দশক ধরে নিজেদের নামে নথি জাল করে জমি দখল করেছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড ইছামতিতে ১০৫৩টি অবৈধ স্থাপনা চিহ্নিত করেছে। দখলকারীরা একাধিক মামলা দায়ের করেছে, ৭৩টি মামলা এখনো আদালতে বিচারাধীন রয়েছে বলে কর্তৃপক্ষ জানান।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের পাবনার সহকারী পরিচালক মো: মোশারফ হোসেন বলেন, ‘সিএস ম্যাপ অনুযায়ী ইছামতি ড্রেজিং করাসহ আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী অবৈধ স্থাপনা অপসারণ করা হচ্ছে।’

সর্বশেষ
জনপ্রিয়