ঢাকা, মঙ্গলবার   ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ||  আশ্বিন ১ ১৪৩১

বন্যার্তদের সাহায্য করা বড় সওয়াবের কাজ

নিউজ ডেস্ক

প্রকাশিত: ১৬:৫২, ২৭ আগস্ট ২০২৪  

বন্যার্তদের সাহায্য করা বড় সওয়াবের কাজ

বন্যার্তদের সাহায্য করা বড় সওয়াবের কাজ

দেশের ১১ জেলায় চলমান স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যা। এই বন্যা পরিস্থিতির অবনতির কারণে অসহায় মানুষ পানিবন্দি অবস্থায় জীবনযাপন করছেন। এমন অবস্থায় দেশের বিত্তবান ও মানবিক গুণসম্পন্ন ব্যক্তিদের দায়িত্ব হচ্ছে, বানভাসি মানুষের পাশে দাঁড়ানো।

বন্যা কবলিত এলাকার ক্ষতিগ্রস্ত বানভাসি মানুষের পাশে যার যা কিছু আছে, তা নিয়েই স্বতঃস্ফূর্তভাবে এগিয়ে আসা ইমানি দায়িত্ব ও নববি আদর্শ। অসহায় মানুষকে খাদ্য বস্ত্র দিয়ে সাহায্যের ফজিলত সম্পর্কে হাদিসে অসংখ্য বর্ণনা রয়েছে।

সারাদেশে এখন পর্যন্ত বন্যায় ১১ জেলা, ৭৪ উপজেলা এবং ৫৫০টি  ইউনিয়ন/পৌরসভা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এই ১১ জেলায় মোট ক্ষতিগ্রস্ত লোকসংখ্যা ৫৭ লাখ ১ হাজার ২০৪ জন। মোট পানিবন্দি পরিবার রয়েছে ১২ লাখ ৩৮ হাজার ৪৮টি। এর মধ্যে কুমিল্লা, ফেনী, চট্টগ্রামে, খাগড়াছড়ি, নোয়াখালী, ব্রাহ্মণবাড়িয়া , লক্ষ্মীপুরে এবং কক্সবাজারে বেশ কিছু মানুষ মারা গেছেন। দেশের বিপদগ্রস্ত মানুষগুলোর পাশে দাঁড়ানো সবার ইমানি দায়িত্ব।

অসহায় মানুষ ও সৃষ্টির সেবা ইসলামের গুরুত্বপূর্ণ একটি বিধান। এটি স্বতন্ত্র একটি ইবাদতও বটে। এ বিষয়ে ত্রুটি হলে কেয়ামতের দিন মহান রাব্বুল আলামিন আল্লাহ তাআলার সামনে জবাবদিহিতার মুখোমুখি হতে হবে। প্রশ্ন করা হবে বস্ত্রহীনদের বস্ত্রদান ও ক্ষুধার্তদের খাদ্যদান সম্পর্কে। ইসলাম মানবীয় গুণাবলির ক্ষেত্রে পরোপকার ও জনকল্যাণমূলক কাজকে অন্যতম শ্রেষ্ঠ গুণ আখ্যা দিয়ে এর প্রতি উৎসাহ দেয়। কোরআনুল কারিমের সূরা কাসাসের ৭৭ নম্বর আয়াতে মহান আল্লাহ বলেন, ‘তোমরা মানুষের প্রতি তেমন অনুগ্রহ করো (সদকা বা যেকোনো উপায়ে) যেমন আল্লাহ তোমাদের প্রতি অনুগ্রহ করেছেন’।

সূরা বাকারার ২৭১ নম্বর আয়াতে ইরশাদ হয়েছে, ‘যদি তোমরা প্রকাশ্যে দান-খয়রাত করো তবে তা কতই না উত্তম। আর যদি দান গোপনে করো এবং অভাবগ্রস্তদের দিয়ে দাও তবে তা তোমাদের জন্য আরো উত্তম। (এর দ্বারা) আল্লাহ তোমাদের গুনাহ মাফ করে দেবেন। জেনে রাখ, তিনি তোমাদের কাজকর্মের ব্যাপারে অধিক খবর রাখেন’।

অসহায়-দুর্গত বানভাসিদের মধ্যে সরকারি-বেসরকারিভাবে ত্রাণ তৎপরতা, বিভিন্ন প্রকার সহযোগিতা চোখে পড়লেও তা মোটেই পর্যাপ্ত নয়; বরং পরিস্থিতির প্রেক্ষাপটে প্রয়োজনের তুলনায় খুবই স্বল্প ও সীমিত। আলহামদুলিল্লাহ, আল্লাহ তাআলা বন্যার্ত মানুষদের তুলনায় আমাদের অনেককেই ভালো রেখেছেন, সুখে-শান্তিতে রেখেছেন। আমরা যারা বন্যা পরিস্থিতি থেকে নিরাপদ রয়েছি, আমাদের মানবিক দায়িত্ব হচ্ছে, নিজেদের উপলব্ধি ও বিবেকবোধ জাগ্রত করা, বন্যাকবলিত অসহায় মানুষদের কথা ভাবা। দয়া ও ভালোবাসা পরবশ হয়ে আরো আন্তরিকতার সঙ্গে বন্যার্তদের সাহায্যে এগিয়ে আসা।

বর্তমানে যারা বানভাসি হয়েছে এবং যারা নিরাপদে আছে, তাদের উভয়ের জন্যই এই বন্যা একটি পরীক্ষা। বন্যার্তদের ওপর পরীক্ষা হচ্ছে, তারা এই বিপদে কতটা ধৈর্যধারণ করেন। পক্ষান্তরে যারা নিরাপদে আছে, তার জন্য পরীক্ষা হলো সামর্থ্য অনুযায়ী তারা বন্যার্তদের সাহায্যে এগিয়ে আসেন কি না। বন্যাদুর্গতরা যেমন এই চরম বিপদে আল্লাহর কাছে সবর, তথা ধৈর্যের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে প্রভূত কল্যাণ ও মর্যাদা লাভের সুযোগ গ্রহণ করতে পারে। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘নিশ্চয়ই আমি (আল্লাহ) তোমাদের ভয়, ক্ষুধা এবং ধনসম্পদ ও ফল-ফসলের ক্ষয়ক্ষতি দিয়ে পরীক্ষা করব। (হে রাসূল!) আপনি ধৈর্যশীলদের শুভসংবাদ প্রদান করুন’। (সূরা: আল বাকারা, আয়াত: ১৫৫)

তেমনি যারা বন্যায় আক্রান্ত হয়নি, তারাও ওই বন্যাদুর্গতদের জন্য ত্রাণসামগ্রী, খাদ্য, বস্ত্র, ওষুধ, খাবার স্যালাইন ও বিশুদ্ধ পানি সরবরাহের মাধ্যমে তাদের প্রতি সহমর্মিতা প্রকাশের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে পারে। তাই বন্যাদুর্গতদের সাহায্যে এগিয়ে আসা দেশের ধনাঢ্য ও সংগতিসম্পন্নদের ওপর অবশ্য কর্তব্য। বিত্তশালীরা যদি আল্লাহর পরিবারের অন্তর্ভুক্ত এই সব মানুষের মানবেতর জীবনযাপন দেখেও তাদের সাহায্যে এগিয়ে না এসে হাত গুটিয়ে বসে থাকে, তাহলে আল্লাহর কাছে জবাব দিতে হবে।

সামর্থ্যবান হওয়া সত্ত্বেও যারা বন্যার্তদের সাহায্যে এগিয়ে আসবে না, তাদের জন্য আল্লাহর দয়া সংকুচিত হয়ে আসবে। নবী করিম (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি মানুষের প্রতি দয়া করে না, তার প্রতিও দয়া করা হয় না’। (সুনানে তিরমিজি: ৪/৩২৩)

পক্ষান্তরে যারা তাদের এই দুঃখের দিনে সামর্থ্য অনুযায়ী সাহায্য করে, তাদের ধর্মীয় দায়িত্ব পালন করবে, মহান আল্লাহ তাদের মহান পুরস্কারে ভূষিত করবেন। এ প্রসঙ্গে হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘জমিনে যারা আছে, তাদের প্রতি দয়া করো, আকাশে যিনি আছেন, তিনি তোমাদের প্রতি দয়া করবেন’। (সুনানে তিরমিজি: ৪/৩২৩)

বন্যার্তদের জন্য সামর্থ্য অনুযায়ী সাহায্যের হাত সম্প্রসারিত করলে আল্লাহ তাদের জান্নাতে রিজিক দিয়ে সম্মানিত করবেন। রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি কোনো বস্ত্রহীনকে কাপড় পরাবে, আল্লাহ তাকে জান্নাতের সবুজ রেশমি কাপড় পরাবেন। যে ব্যক্তি কোনো ক্ষুধার্ত ব্যক্তিকে আহার করাবে, আল্লাহ তাকে জান্নাতের ফল খাওয়াবেন। যে ব্যক্তি কোনো তৃষ্ণার্তকে পানি পান করাবে, আল্লাহ তাকে জান্নাতের পবিত্র প্রতীকধারী পানীয় পান করাবেন’। (সুনানে আবু দাউদ: ২/১৩০)

আমাদের যাদের সামর্থ্য কম, তারাও এই বন্যাদুর্গত ভাই-বোনদের সাহায্যে এগিয়ে আসতে পারি। আমাদের পক্ষ থেকে ত্রাণ, খাবার ও ওষুধ যদি কমও হয়, তবুও আল্লাহর কাছে তা খুবই প্রিয় হবে।

এছাড়া ত্রাণ সংগ্রহ করে বিতরণের কাজেও আত্মনিয়োগ করতে পারি। আশা করা যায়, এই প্রচেষ্টা ও আমল আল্লাহ পছন্দ করবেন। রাসূলে করিম (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি হালাল উপার্জন থেকে একটি খেজুর পরিমাণ দান করবে (আল্লাহর কাছে তা এতই প্রিয় হবে যে), আল্লাহ একে ডান হাতে কবুল করবেন। এরপর একে দাতার জন্য তোমাদের কারো অশ্বশাবককে প্রতিপালনের মতো করবেন এবং প্রতিপালন করতে করতে পাহাড় পরিমাণ বড় করবেন (পাহাড় পরিমাণ দানের সওয়াব দান করবেন)’। (সহিহ বোখারি: ২/১০৮)

অন্যান্য হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, দান-সদকা বিপদ-বিপর্যয় দূরীভূত করে, জীবনে সমৃদ্ধি এনে দেয়। পাপমোচন করে, ক্ষমালাভের মাধ্যম হয়। আল্লাহর ক্রোধ থেকে বাঁচিয়ে রাখে। অসুখ-বিসুখ থেকে সুস্থতা পাওয়া যায়। সুতরাং বর্তমান অবস্থায় নাম কুড়ানো, লৌকিকতা কিংবা দায়সারাভাবে নয়; মনুষ্যত্ব ও মানবতার দায়িত্ববোধ নিয়ে সাধ্যানুযায়ী বন্যাদুর্গত, অসহায় মানুষদের পাশে দাঁড়াতে হবে।

সর্বশেষ
জনপ্রিয়