ঢাকা, সোমবার   ২৪ জুন ২০২৪ ||  আষাঢ় ১০ ১৪৩১

বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ ও পুলিশকে সতর্ক থাকার নির্দেশ

নিউজ ডেস্ক

প্রকাশিত: ১২:৪৫, ১৬ জুন ২০২৪  

বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ ও পুলিশকে সতর্ক থাকার নির্দেশ

বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ ও পুলিশকে সতর্ক থাকার নির্দেশ

মিয়ানমারের জান্তা সরকার ও আরাকান আর্মির মধ্যে কয়েক মাস ধরে সংঘর্ষ চলছে। সীমান্ত এলাকায় ওই সংঘর্ষ চলাকালে ওপারে ছোড়া গুলি বাংলাদেশে চলাচলরত নৌযানে এসে লাগছে। এতে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে পুরো সেন্টমার্টিন ও টেকনাফ এলাকায়। এই পরিস্থিতিতে পুলিশ সদর দপ্তর থেকে একটি বিশেষ নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে পুলিশের রেঞ্জ ডিআইজি ও আরও কয়েকটি ইউনিটকে। এতে যেকোনো পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে সতর্ক দৃষ্টি রাখতে বলা হয়েছে। পুলিশের পাশাপাশি বর্ডার গার্ড বাংলাদেশও (বিজিবি) সতর্ক আছে বলে পুলিশের একটি সূত্র জানায়। ইতিমধ্যে পুলিশ সদর দপ্তরে ঊর্ধ্বতনরা বৈঠক করেছেন। আরও বৈঠক করেছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্র সচিবসহ ঊর্ধ্বতনরা।

কক্সবাজারের টেকনাফ থেকে ৯ কিলোমিটার দক্ষিণে এবং মিয়ানমার উপকূল থেকে ৮ কিলোমিটার পশ্চিমে নাফ নদীর মোহনায় সেন্টমার্টিন দ্বীপটির অবস্থান। প্রায় ১৫ দিন ধরে মিয়ানমার থেকে গুলি ছোড়া হচ্ছে। তা ছাড়া তিনটি যুদ্ধজাহাজ বাংলাদেশের সীমানায় অবস্থান নিলেও পরে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। এরই আলোকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সতর্ক হয়ে উঠেছে। দুদিন আগে পুলিশ সদর দপ্তরে বাংলাদেশ সীমান্তে মিয়ানমারের যুদ্ধজাহাজ অবস্থান করা ও গুলিবর্ষণ করায় আইজিপিসহ ঊর্ধ্বতনরা বৈঠক করেছেন। পাশাপাশি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্র সচিবও আলাদাভাবে বৈঠক করেছেন। বৈঠক শেষে চট্টগ্রাম রেঞ্জ ডিআইজি, কক্সবাজার, রাঙ্গামাটি, বান্দরবান ও খাগড়াছড়ির পুলিশ সুপারকে বিশেষ নির্দেশনা দিয়েছেন। তা ছাড়া পুলিশের কয়েকটি ইউনিটকে বার্তা দেওয়া হয়েছে।

পুলিশ সূত্র জানায়, পুলিশের নির্দেশনায় বলা হয়েছে, কোনো দেশ বা কোনো সংগঠন বাড়াবাড়ি করলে তাদের পরিস্থিতি আগে বুঝতে হবে। সবাইকে সতর্কভাবে এগিয়ে যেতে হবে। সেন্টমার্টিনে নজরদারি বাড়াতে হবে। সাগর পথে টহল বৃদ্ধি করতে হবে।

নির্দেশনা পেয়ে পুলিশ ইতিমধ্যে কাজ শুরু করে দিয়েছে বলে জানান কক্সবাজার জেলা পুলিশের এক কর্মকর্তা। তিনি বলেন, ‘সেন্টমার্টিন নিয়ে আমরা উদ্বেগের মধ্যে আছি। তবে কেউ অহেতুক বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চেষ্টা করলে তাদের কঠোরভাবে মোকাবিলা করা হবে। কোনো ধরনের ছাড় পাবে না। এই দ্বীপটি দখলে নিতে কোনো কোনো দেশ চেষ্টা করে আসছে। মিয়ানমারের বর্তমান পরিস্থিতি সামনে রেখে সেন্টমার্টিন অঞ্চল উত্তপ্ত করার চেষ্টা করছে।’

ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, ‘এই অঞ্চলের বিভিন্ন আঞ্চলিক রাজনৈতিক সংগঠন ও বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠীগুলো তৎপর আছে বলে আমরা তথ্য পাচ্ছি। তার মধ্যে ত্রিপুরার ন্যাশনাল লিবারেশন ফ্রন্ট অব তুইপ্রা (এনএলএফটি), মিজোরামের লালডেঙ্গার নেতৃত্বাধীন মিজো ন্যাশনাল ফ্রন্ট (এমএনএফ), অল ট্রাইবাল স্টুডেন্টস ইউনিয়ন (এটিএসইউএম), ন্যাশনাল লিবারেশন আর্মি (কেএনএলএ), আরাকান লিবারেশন আর্মি (এএলএ) ও আতাউল্লাহ আবু আম্মার জুনুনির নেতৃত্বাধীন আরাকান রোহিঙ্গা সলভেশন আর্মি (এআরসএ)। এসব সংগঠনের সদস্যরা গোপনে সেন্টমার্টিনে আসা-যাওয়া করছেন।’

জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বলেন, ‘সেন্টমার্টিন নিয়ে আমরা ওয়াকিবহাল। আমরা প্রতিটি বিষয়ে সতর্ক দৃষ্টি রেখেছি। মিয়ানমার সরকার আমাদের সহায়তা করবে বলে আশা করছি। তাদের নৌজাহাজ বাংলাদেশের সীমানায় এলে তা সরানোর অনুরোধ করা হবে। টেকনাফ থেকে সেন্টমার্টিন যাওয়ার পথে নাফ নদে বাংলাদেশের ট্রলার ও স্পিডবোটে মিয়ানমার থেকে গুলি করা হচ্ছে। তবে কারা গুলি করেছে, তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি।’

সূত্র আরও জানায়, গত ১৫ দিনের ব্যবধানে সেন্টমার্টিনে আসা-যাওয়ার সময় অন্তত ১০টি গুলির ঘটনা ঘটেছে। এরপর আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে স্থানীয় লোকজনের মধ্যে। ফলে সেন্টমার্টিন দ্বীপে বসবাসরত ১০ হাজারের বেশি বাসিন্দা বেশ সংকটে পড়েছে। বেশিরভাগ দোকানে নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রীর মজুদও অনেকটা ফুরিয়ে আসছে। প্রতিদিনই গোলাগুলি ও বিস্ফোরণের শব্দ শুনছে টেকনাফ ও সেন্টমার্টিনের লোকজন। দেশটির সরকারি বাহিনীর সঙ্গে বিদ্রোহীদের তুমুল লড়াইয়ের কারণে এসব গোলাগুলি হচ্ছে।

স্থানীয় লোকজন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তারা বলেছেন, মিয়ানমারের দিক থেকে বাংলাদেশে চলাচলকারী নৌকা লক্ষ্য করে গুলি করা হয়েছে। গত ৫ জুন সেন্টমার্টিন থেকে সরকারি কর্মকর্তাদের একটি দল নির্বাচনে ব্যবহৃত সরঞ্জাম নিয়ে টেকনাফে ফেরার সময় তাদের নৌযানকে লক্ষ্য করে গুলির ঘটনা ঘটে। ওইদিন সন্ধ্যায় নাফ নদীতে বদরমোকাম এলাকার উল্টো দিক থেকে এলোপাতাড়ি গুলি ছোড়া হয়। ট্রলারে থাকা উপজেলা সহকারী কমিশনারসহ কর্মকর্তারা প্রাণে রক্ষা পেলেও ট্রলারে বেশ কয়েকটি গুলি লাগে। ৮ জুন টেকনাফ থেকে সেন্টমার্টিন যাওয়ার সময় গুলির মুখে পড়ে একটি মালবাহী ট্রলার। ১১ জুন সকালে স্পিডবোটে করে একজন রোগী নেওয়ার সময় স্পিডবোট লক্ষ্য করে ১০ রাউন্ডের মতো গুলি করা হয়, যার কয়েকটি স্পিডবোটেও লেগেছে। মিয়ানমার অংশে নাফ নদীতে মিয়ানমারের সরকারি বাহিনী নৌযানে করে টহল দিচ্ছে। ওরাই গুলি করছে বাংলাদেশের নৌযানগুলোয়। সেন্টমার্টিনের ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য সৈয়দ আলম কিছুদিন আগে বলেছেন, ‘সেন্টমার্টিন ও টেকনাফ দুই অংশেই লোকজন আটকা পড়ে আছে। আমরা সাগর বা নদীতে যেতে পারছি না। বাংলাদেশের লোকজনকে লক্ষ্য করে নিয়মিত গুলি ছোড়া হচ্ছে।’

সর্বশেষ
জনপ্রিয়