ঢাকা, শুক্রবার   ২৮ জুন ২০২৪ ||  আষাঢ় ১৪ ১৪৩১

বর্ষায় ঘুরে আসুন সীতাকুণ্ড, যা যা দেখবেন

নিউজ ডেস্ক

প্রকাশিত: ১৭:৩২, ২১ জুন ২০২৪  

বর্ষায় ঘুরে আসুন সীতাকুণ্ড, যা যা দেখবেন

বর্ষায় ঘুরে আসুন সীতাকুণ্ড, যা যা দেখবেন

বর্ষায় চট্টগ্রামের মিরসরাই ও সীতাকুণ্ড হয়ে উঠে প্রকৃতির স্বর্গরাজ্য। যেখানে পাহাড় ছুঁয়ে যায় আকাশকে, আর পাহাড়ের বুক চিরে নেমে আসা অসংখ্য ঝর্ণা, মেঘেরা বিচরণ কিরে আকাশজুড়ে। এই পাহাড় রেঞ্জটি একটি ঝরনার ঝুড়ি বিশেষ। এই অঞ্চলে যতগুলো ঝরনা, ঝিরিপথ আছে, তা গুনে শেষ করা কঠিন। তারওপর মনোমুগ্ধর কিছু লেক ও সমুদ্র সৈকত।

দেশে এরই মধ্যে বৃষ্টিপাত শুরু হয়েছে। চট্টগ্রামের এই অঞ্চলও প্রকৃতিপ্রেমীদের জন্য প্রাণপণ প্রস্তুত। বর্ষায় একটা ঝিরিপথ টার্গেট করে ভ্রমণ করলে পাওয়া যাবে তিনটা থেকে শুরু করে দশটা পর্যন্ত ঝরনা। তো, এই তালিকা দেখে বেছে নিতে পারেন আপনার ট্রেইল; সঙ্গে যোগ করতে পারে যেকোনো সৈকত কিংবা লেক। আজ প্রথম পর্ব-

সোনাইছড়ি ট্রেইল

দুর্গম, রহস্যময় এবং সুন্দর; এই তিনটি শব্দ সোনাইছড়ি ট্রেইলের বিশেষ বলা যায়। বাদুইজ্জাকুমের দুই পাশের ১০০-১৫০ ফুট উঁচু খাড়া পাথুরে দেওয়ালের অন্ধকারে হাজার হাজার বাঁদুরের ডানা ঝাপটানো শব্দ ভুতুড়ে পরিবেশের সৃষ্টি করে। আর ২৮ কিলোমিটার ট্রেইলের শেষ প্রান্তে পৌঁছালে অপূর্ব সোনাইছড়ি ঝরনা নিমিষেই সমস্ত ক্লান্তি দূর করে দেয়। তবে এই দলগতভাবে এবং বাড়তি সতর্কতা মেনে যাওয়া উচিত।

নাপিত্তাছড়া ট্রেইল

অন্যতম সুন্দর ট্রেইল নাপিত্তাছড়া। এখানে আছে নাপিত্তাছড়া, বাঘবিয়ানী ও বান্দরকুম ঝরনা। আছে কুপিকাটাকুম নামে দারুণ একটি খুম। তুলনামূলক সহজ ট্রেইল হওয়ায় একটু কষ্ট করলে একদিনেই পুরো ট্রেইল হেঁটে উপভোগ করতে পারবেন। মিরসরাইয়ের নয়দুয়ারীবাজারে নেমে এই ট্রেইল ধরে যেতে হয় নাপিত্তাছড়া ঝরনায়।

খৈয়াছড়া ট্রেইল

সীতাকুণ্ড-মিরসরাই অঞ্চলের সবচেয়ে জনপ্রিয় ট্রেইল এটি। এখানে আছে ৮ স্তরবিশিষ্ট ঝরনা। হেঁটে পুরোটা উঠে আরও ওপরে গেলে পাওয়া যাবে ‘ডাবল ফলস’। একেবারে শেষ প্রান্তে গেলে ‘আমতলী খুম’, সেখান থেকে হাতের ডানপাশে বা দক্ষিণ দিকে এগোলে চোখে পড়বে একটি চিকন ঝিরি। সেই পথে একটু এগোলে পাওয়া যাবে ৩ স্তরবিশিষ্ট ‘শিমুলতলী ঝরনা’। খৈয়াছড়া যেতে হলে ঢাকা থেকে মিরসরাইয়ের আগে বড় তাকিয়া বাজারে নামতে হবে।

বোয়ালিয়া ট্রেইল

বোয়ালিয়া ট্রেইলকে বলা হয়ে থাকে রহস্যময় সুন্দর ট্রেইল। পুরো পথেই চেনা-অচেনা অসংখ্য ঝরনার সঙ্গে আপনার আলাপ হবে। যাওয়ার পথে প্রথমে আপনি পাবেন বোয়ালিয়া ঝরনা, এরপর উঠান ঝরনা, নেহাতখুম, লতাবিয়ানি। পথটি বেশ কঠিন, আর বর্ষায় যথেষ্ট পিচ্ছিল। মীরসরাই কলেজ এলাকা থেকে স্থানীয় গাইডের সাহায্য নিয়ে যাওয়াই উত্তম।

গুলিয়াখালী সমুদ্র সৈকত

অনিন্দ্য সুন্দর গুলিয়াখালি সমুদ্রসৈকতকে সাজাতে প্রকৃতি কোনো কার্পণ্য করেনি। একদিকে দিগন্তজোড়া সাগর জলরাশি আর অন্যদিকে কেওড়া বন এই সমুদ্রসৈকতকে করেছে অনন্য। এ সৈকতকে ভিন্নতা দিয়েছে সবুজ গালিচার বিস্তৃত ঘাস। চারপাশে সবুজ ঘাস আর তারই মধ্যে ছোট ছোট নালায় পানি পূর্ণ এই দৃশ্য যে কাউকে মুগ্ধ করবে। ব্যাপারটা অনেকটা ছোট ছোট দ্বীপের মতো। সীতাকুণ্ড বাজার থেকে গুলিয়াখালি সমুদ্রসৈকতের দূরত্ব মাত্র ৫ কিলোমিটার।

কীভাবে যাবেন

ঢাকা থেকে বাসে সীতাকুন্ড : ঢাকার সায়েদাবাদ, ফকিরাপুল, মহাখালি যে কোনো বাসস্ট্যান্ড থেকে চট্টগ্রামগামী যেকোনো বাসে করেই যেতে পারবেন সীতাকুন্ড। এস আলম, শ্যামলি, সৌদিয়া, ইউনিক, হানিফ, ঈগল, এনা প্রভৃতি পরিবহনের নন এসি বাস ভাড়া ৪২০- ৪৮০ টাকা। এসি বাসের মধ্যে গ্রিনলাইন, সৌদিয়া, সোহাগ, টি আর এইসব বাস ভাড়া ৮০০-১১০০ টাকা।

ঢাকা থেকে ট্রেনে সীতাকুন্ড : ঢাকা থেকে চট্টগ্রামগামী যেকোনো আন্তঃনগর ট্রেনে এসে ফেনী স্টেশনে নামতে হবে। শ্রেণি ভেদে ট্রেন ভাড়া জন প্রতি ২৫০-১০৩৫ টাকা। ফেনী স্টেশন থেকে ১০-১৫ টাকা রিকশা/অটো দিয়ে ফেনী মহিপাল বাস স্ট্যান্ড যেতে হবে। সেখান থেকে লোকাল বাসে ৫০-৮০ টাকা ভাড়ায় সীতাকুন্ড যেতে পারবেন।

চট্টগ্রাম থেকে সীতাকুন্ড: চট্টগ্রাম থেকে সিএনজি বা অটোরিক্সা রিজার্ভ নিয়ে সীতাকুণ্ডে আসতে ভাড়া লাগবে ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা। আর বাসে করে যেতে চাইলে আপনাকে চট্টগ্রাম নগরীর অলংকার, এ কে খান মোড় অথবা কদমতলী যেতে হবে। লোকাল বাসে সীতাকুণ্ড যেতে পারবেন ৪০- ৮০ টাকা ভাড়ায়।

কোথায় থাকবেন

সীতাকুন্ড কাঁচাবাজার এলাকায় এবং সীতাকুণ্ড থানা সংলগ্ন এলাকায় মোটামুটি মানের অল্পকিছু আবাসিক হোটেল রয়েছে যাদের মধ্যে হোটেল কম্পোর্ট জোন, জলসা, নিউ সৌদিয়া, সৌদিয়া, সায়মন উল্লেখযোগ্য। হোটেল কম্পোট জোন, জলসা, নিউ সৌদিয়া অপেক্ষাকৃত নতুন এবং মান ভালো। এসব হোটেলে রুম ভাড়া এসি ডাবল বেড – ১০০০/১২০০ টাকা এবং নন এসি ৫০০-৮০০ টাকার মধ্যে।

এছাড়া নিকটবর্তী চট্টগ্রাম বা ফেনী শহরের যে কোনো মানের হোটেল বা রেস্টুরেন্ট পেয়ে যাবেন। এছাড়া সীতাকুণ্ড অথবা ভাটিয়ারীতে থাকার জন্য আবাসিক সুব্যবস্থা রয়েছে।

সতর্কতা

পাহাড় ও ঝরনা ভ্রমণে অবশ্যই আপনাকে সতর্ক থাকতে হবে। পাহাড়ে উঠার জন্যে এবং ঝর্ণার ট্রেইলে যাওয়ার জন্যে যথেষ্ট মানসিক ও শারীরিক শক্তি থাকা প্রয়োজন। চন্দ্রনাথ পাহাড়ে ও ঝর্ণায় ছোট বাচ্চা কিংবা বয়স্ক কাউকে নিয়ে যাওয়া উচিত নয়। প্রতিটি জায়গা সম্পর্কে আরও বিস্তারিত তথ্য ও পরামর্শ জানার জন্যে সেই জায়গাগুলোর ভ্রমণ গাইড পড়ে নিন।

সর্বশেষ
জনপ্রিয়