ঢাকা, বৃহস্পতিবার   ০৪ জুলাই ২০২৪ ||  আষাঢ় ২০ ১৪৩১

বান্দরবানে পাহাড়ের ভাঁজে শোভা পাচ্ছে পাকা আনারস

নিউজ ডেস্ক

প্রকাশিত: ১৬:০৩, ২ জুলাই ২০২৪  

বান্দরবানে পাহাড়ের ভাঁজে শোভা পাচ্ছে পাকা আনারস

বান্দরবানে পাহাড়ের ভাঁজে শোভা পাচ্ছে পাকা আনারস

পাহাড়ের ভাঁজে ভাঁজে সুভাষ ছড়াচ্ছে পাকা আনারস। বান্দরবানের রুমা, রোয়াংছড়ি, থানচি সদরসহ চিম্বুক এলাকার প্রতিটি পাহাড়ের ঢালে এখন শোভা পাচ্ছে পাকা আনারস।আকারে বড়, রসালো ও খেতে সুস্বাদু হওয়ায় দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সরবরাহ হচ্ছে বান্দরবানে উৎপাদিত আনারস। ফলন ভাল ও দাম ভালো পাওয়ায় খুশি জুমিয়ারা।

জেলার রুমা, থানচি, রোয়াংছড়ি সদরের চিম্বুক, লাইমিপাড়া, ফারুক পাড়া, শৈলপ্রপাতসহ সব পাহাড়ে এখন একই চিত্র। প্রতিটি পাহাড়ের ঢাল ঢেকে গেছে পাকা আনারসে।

প্রতি বছর মার্চ-এপ্রিল মাসে পাহাড়ের জমি প্রস্তুত করে লাগানো হয় আনারসের চারা। মে-জুন মাসে বিক্রির উপযোগী হয় প্রতিটি আনারস। আর কাঁধে থুরুং নিয়ে বাগান থেকে বিক্রয় উপযোগী এসব আনারস সংগ্রহে ব্যস্ত সময় পার করছেন জুমিয়ারা। সেই আনারস বিক্রি হচ্ছে স্থানীয় হাটবাজার ও পর্যটন কেন্দ্রগুলোতে।

এছাড়াও পাইকারি বিক্রেতারা বাগানে গিয়ে আনারস কিনে দেশের বিভিন্ন জায়গায় নিয়ে যাচ্ছেন। পাহাড়ে উৎপাদিত জায়ান্ট কিউ জাতের আনারস আকারে বড় ও খেতে সুস্বাদু হওয়ায় বাজারে এর চাহিদাও বেশি। বড় সাইজের প্রতি জোড়া আনারস বাজারে বিক্রি হয় ১০০ থেকে ১৫০ টাকা।

শুধু তাই নয়, পাহাড়ে উৎপাদিত আনারস সরবরাহ হচ্ছে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে। পাহাড়ের মাটি ও আবহাওয়া জায়ান্ট কিউ আনারস চাষের উপযোগী হওয়ায় স্বল্প পরিশ্রম ও কম খরচে অধিক লাভবান হচ্ছেন জুমিয়া চাষীরা।

লাইমিপাড়া এলাকার চাষী পাকসিয়াম বম বলেন, ‘এ বছর আনারসের ফলন মোটামুটি ভালো হয়েছে। আমাদের পাহাড়ে উৎপাদিত আনারস অন্যান্য জেলার আনারসের চেয়ে অনেক ভালো। খুবই মিষ্টি, রসালো ও আকারে বড় হওয়ায় পাইকাররা বাগানে এসে আনারস কিনে নিয়ে যাচ্ছেন।

‘আমাদের বাজারে গিয়ে বিক্রি করতে হয় না। পর্যটকরাও আসেন। অনেকে এখানে বসেই আনারসের স্বাদ নেন। আবার অনেকে বাড়ির জন্য নিয়ে যান। তবে পাইকারি বিক্রির চেয়ে খুচরা বিক্রি করতে পারলে আমাদের লাভ বেশি হয়।’

ফারুক পাড়া এলাকার আরেক কৃষক সানতোয়াল বম বলেন, ‘এ বছর ছয় একর জায়গায় আনারসের বাগান করেছি। পর্যাপ্ত বৃষ্টি না হলেও ফলন ভালো হয়েছে। বাজারে চাহিদা থাকায় দামও মোটামুটি ভালো পাওয়া যাচ্ছে।

‘অন্যান্য ফসল চাষের তুলনায় আনারস চাষে পরিচর্যা তেমন একটা না করলেও চলে। অনেক সময় একই জমিতে দুবার ফলন পাওয়া যায়।’

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক এম এম শাহনেওয়াজ বলেন, ‘এ অঞ্চলে উৎপাদিত জায়ান্ট কিউ এবং হানি কুইন আনারস আকারে বড়, রসালো ও খেতে খুবই সুস্বাদু। এ কারণে দেশের বিভিন্ন জেলায় এ অঞ্চলে উৎপাদিত আনারসের চাহিদাও রয়েছে বেশ।’

তিনি আরও বলেন, ‘ফলন বাড়াতে আনারস চাষিদের প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ এবং নতুন নতুন প্রযুক্তি দেয়া হচ্ছে। কিন্তু এখানে আনারসসহ মৌসুমি ফল সংরক্ষণের কোনো ব্যবস্থা না থাকায় পচনশীল এসব পণ্য অনেক সময় কম মূল্যে বিক্রি করে দিতে বাধ্য হচ্ছেন চাষিরা। তাই যাতে আনারস সংরক্ষণের মাধ্যমে আনারস থেকে বিভিন্ন খাদ্যপণ্য উৎপাদন করা যায় সে বিষয়ে আমরা কাজ করছি।’

সংরক্ষণের ব্যবস্থা করা গেলে কৃষকরা অধিক লাভবান হবেন বলে মনে করছেন এই কৃষি কর্মকর্তা।

কৃষি বিভাগের তথ্যমতে, বিগত বছর জেলায় তিন হাজার ৭৫০ হেক্টর জমিতে উৎপাদিত হয়েছে ৯৭ হাজার টন আনারস। আর চলতি বছর তিন হাজার ৮৫০ হেক্টর জমিতে আনারসের আবাদ হয়েছে। উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৯৯ হাজার টন।

সারাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত
সর্বশেষ
জনপ্রিয়