ঢাকা, সোমবার   ২৪ জুন ২০২৪ ||  আষাঢ় ১০ ১৪৩১

রাঙ্গামাটি ভ্রমণের আদ্যোপান্ত : কী দেখবেন, কোথায় থাকবেন-খাবেন

নিউজ ডেস্ক

প্রকাশিত: ১৪:৩৩, ১৬ জুন ২০২৪  

রাঙ্গামাটি ভ্রমণের আদ্যোপান্ত : কী দেখবেন, কোথায় থাকবেন-খাবেন

রাঙ্গামাটি ভ্রমণের আদ্যোপান্ত : কী দেখবেন, কোথায় থাকবেন-খাবেন

‘গ্রামছাড়া ওই রাঙা মাটির পথ, আমার মন ভুলায় রে...’গানটার মতোই নান্দনিক বাংলাদেশের পার্বত্য জেলা রাঙ্গামাটি। সবুজ অরণ্য আর ছোট-বড় পাহাড়ে ঘেরা রাঙ্গামাটি যেন কোনো শিল্পীর তুলিতে আঁকা এক রূপকথা। রাঙ্গামাটির নাম শুনতেই অনেকের চোখে ভেসে ওঠে কাপ্তাই লেকের দৃশ্য।

স্বচ্ছ জলের বুকে ভেসে পাহাড়ের নৈসর্গিক সৌন্দর্য উপভোগ করতে চাইলে চলে যান রাঙ্গামাটির পথে। চট্টগ্রাম শহর থেকে প্রায় ৭০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত রাঙ্গামাটি জেলা। লেক, বন-বনানী, ঝর্ণা আর সবুজ পাহাড়ে বেষ্টিত দেশের সর্ববৃহৎ এ জেলাটি  প্রাণপ্রাচুর্যে ভরপুর অপূর্ব এক স্থান।

হ্রদের শান্ত জলে নৌকা ভ্রমণ, উঁচু-নিচু সবুজ পাহাড়ের মাঝে জ্যোৎস্নার খেলা, এমনকি মেঘের রাজ্যে নিজেকে হারিয়ে ফেলার মতো চোখ জুড়ানো পর্যটনকেন্দ্র রয়েছে রাঙ্গামাটিতে। এখানকার জায়গাগুলো বছরের বিভিন্ন সময়ে ভিন্ন ভিন্ন রূপে সাজে। তবে বর্ষার সাজ একেবারেই অন্যরূপ।

পাহাড়, নদী ও লেকবেষ্টিত একটি বৈচিত্র্যময় জনপদ যেখানে চাকমা, মারমা, তঞ্চঙ্গ্যা, ত্রিপুরা, মুরং, বোম, খুমি, খেয়াং, চাক্‌, পাংখোয়া, লুসাই,  সুজে সাঁওতাল , রাখাইন সর্বোপরি বাঙালিসহ ১৪টি জনগোষ্ঠীর বসবাস। উল্লেখ্য এখানে কিছু অসমিয়া ও গুরখা সম্প্রদায়ের বসবাস রয়েছে। অতএব, সাংস্কৃতিক দিক থেকে রাঙ্গামাটি জেলা বেশ সমৃদ্ধ।

রাঙ্গামাটির রিজার্ভ বাজার থেকে শুভলং যাবার নৌকা সারাদিনের জন্য ভাড়া করুন। সারাদিনের জন্যে ভাড়া করলে শুভলং ঝর্ণা ছাড়াও অন্যান্য দর্শনীয় স্থান ঘুরে দেখতে পারবেন। এখানে সাধারণত নৌকার সাইজের উপর ভাড়া কম বেশি হয়ে থাকে। তবে মোটামুটি সাইজের একটা নৌকা ১০০০-১৫০০ টাকার মধ্যে ভাড়া করা যায়। ১০-১৫ জন যাওয়া যায় এক নৌকাতে। শুভলং ঝর্ণা পর্যন্ত যেতে দেড় থেকে দুই ঘণ্টা সময় লাগে। লেকের মধ্যে দেখার মত আরো ৭-৮ টা জায়গা আছে। সময় থাকলে সবগুলো ঘুরে দেখে নিন। এছাড়া যদি ভ্রমণসঙ্গী এত জন না থাকে তাহলে রিজার্ভ বাজার থেকে জনপ্রতি প্যাকেজে ঘুরে আসতে পারবেন দর্শনীয় স্থানগুলো।

রাঙ্গামাটির জনপ্রিয় যত পর্যটনকেন্দ্র

কাপ্তাই হ্রদ, ঝুলন্ত সেতু, রাজবন বিহার, শুভলং ঝর্ণা, ফুরোমন পাহাড়, সাজেক ভ্যালি, নৌ বাহিনীর পিকনিক স্পট, কাপ্তাই বাঁধ ও কর্ণফুলি জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র, কাপ্তাই জাতীয় উদ্যান, বীরশ্রেষ্ঠ ল্যান্সনায়েক মুন্সী আব্দুর রউফ স্মৃতি ভাস্কর্য, উপজাতীয় জাদুঘর, কর্ণফুলি কাগজ কল, বেতবুনিয়া ভূ-উপগ্রহ কেন্দ্র, প্যানোরমা জুম রেস্তোরাঁ, পেদা টিং টিং রেস্তোরাঁ, টুকটুক ইকো ভিলেজ, চিৎমরম বৌদ্ধ বিহার, বনশ্রী পর্যটন কমপ্লেক্স, ডলুছড়ি জেতবন বিহার ইত্যাদি।

ভ্রমণের উপযুক্ত সময় 

শীতকাল রাঙ্গামাটি ভ্রমণের জন্য সেরা সময়। বছরের অন্যান্য সময় ভিন্ন ভিন্ন রূপে সাজে রাঙ্গামাটি। লেক, পাহাড় আর নীলাভ পানিতে সারা বছর রাঙ্গামাটি নিজের রূপ মেলে ধরে দর্শনার্থীদের কাছে। তবে যাদের অ্যাডভেঞ্চার বেশ পছন্দ, তারা বর্ষাকালে যেতে পারেন। তবে এই সময়ে অতিরিক্ত সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত।

কীভাবে যাবেন?

ঢাকা থেকে রাঙ্গামাটি: ঢাকার ফকিরেরপুল মোড় ও সায়দাবাদে রাঙ্গামাটিগামী অসংখ্য বাস কাউন্টার রয়েছে। এই বাসগুলো সাধারণত সকাল ৮ টা থেকে ৯ টা এবং রাত ৮ টা থেকে ১১ টার মধ্যে ঢাকা থেকে রাঙ্গামাটির উদ্দেশ্যে ছাড়ে। ঢাকা টু রাঙ্গামাটি এসি বাসের প্রতি সিট ভাড়া ১২০০ থেকে ১৮০০ টাকা। এছাড়া সকল নন-এসি বাসের ভাড়া ৮৫০ থেকে ৯০০ টাকার মধ্যে।

চট্টগ্রাম থেকে রাঙ্গামাটি: চট্টগ্রাম শহরের অক্সিজেন মোড় থেকে রাঙ্গামাটিগামী বিভিন্ন পরিবহণের লোকাল ও গেইটলক বাস পাওয়া যায়। ভাড়া একটু বেশি হলেও গেইটলক বা ডাইরেক্ট বাসে ভ্রমণ করা উচিত। চট্টগ্রাম হতে রাঙ্গামাটি বাস ১৫০ টাকার মধ্যে পেয়ে যাবেন।

কোথায় খাবেন?

কাপ্তাই লেকের মাঝখানে ছোট ছোট দ্বীপে কিছু রেস্তোরাঁ গড়ে উঠেছে, চাইলে সেখান থেকে দুপুর কিংবা প্রয়োজনীয় খাবার সংগ্রহ করে নিতে পারেন। পেদা টিন টিন, মেজাং, জুম ঘরসহ বেশ কিছু বিখ্যাত রেস্টুরেন্ট আছে। সাধারণ খাবারের পাশাপাশি পাহাড়ি খাবারের স্বাদও নিতে পারবেন এসব রেস্টুরেন্টে।

কোথায় থাকবেন?

রাঙ্গামাটিতে বিভিন্ন মানের গেষ্ট হাউজ ও আবাসিক হোটেল রয়েছে। রাঙ্গামাটি শহরের পুরাতন বাস স্ট্যন্ড ও রিজার্ভ বাজার এলাকায় লেকের কাছাকাছি হোটেল ঠিক করার চেষ্টা করুন। তাহলে হোটেল থেকে কাপ্তাই লেকের পরিবেশ ও শান্ত বাতাস উপভোগ করতে পারবেন। এছাড়া কম খরচে থাকতে বোডিং এ যোগাযোগ করতে পারেন। বোডিংগুলোতে থাকতে খরচ কম হলেও এগুলোর অবস্থা খুব একটা ভাল নয়।

কিছু বাজেট ফ্রেন্ডলি আবাসিক হোটেলের নাম ও যোগাযোগের নম্বর:

পর্যটন হলিডে কমপ্লেক্স: প্রতি রাতের জন্য রুম ভাড়া ১ হাজার ৬০০ টাকা থেকে ৬ হাজার টাকা পর্যন্ত। ফোন: 01863231185, 0351-63126

হোটেল জুম প্যালেস: প্রতি রাতের জন্য রুম ভাড়া ১৫০০ টাকা থেকে ৩২০০ টাকা পর্যন্ত। ফোন: 0351-61878, 01625100000

হোটেল সাংহাই ইন্টারন্যাশনাল: প্রতিরাতের রুম ভাড়া ১০০০ টাকা থেকে ৪৫০০ টাকা পর্যন্ত। যোগাযোগ : ০১৮২০৩০৯০০০,০১৭৩০১৯৫৭৭৮

হোটেল নাদিশা ইন্টারন্যাশনাল: প্রতিরাতের রুম ভাড়া ১৫০০ টাকা থেকে ৫০০০ টাকা পর্যন্ত। যোগাযোগ:০১৭৩৭৪৫৩৫৪৫,০১৮৬৬৬০৯৯৯১।

লেকশোর রিসোর্ট, কাপ্তাই: প্রতি রাতের জন্য রুম ভাড়া ৪৫০০ টাকা থেকে ৬৫০০ টাকা পর্যন্ত। ফোন: 01859-778065

হোটেল গ্রিন ক্যাস্টেল: প্রতি রাতের জন্য রুম ভাড়া ৬০০ টাকা থেকে ২৫০০ টাকা পর্যন্ত। ফোন: 01726-511532, 01815-459146

টিপস ও সতর্কতা

একসঙ্গে দলগতভাবে গেলে খরচ কমে যাবে, অফ সিজনে ও ছুটির দিন ব্যতীত গেলে খরচ কম হবে।

ট্রলার/বোট রিজার্ভ করার সময় কি দেখবেন কোথায় যাবেন ভালো করে বলে নিন, রিজার্ভ করার সময় ঠিকমতো দরদাম করে নিতে হবে।

লেকের কাছাকাছি কোনো হোটেল ঠিক করার চেষ্টা করুন।

কোথাও কোথাও লেকের পানির গভীরতা অনেক, নামতে চাইলে মাঝিকে জিজ্ঞেস করে নিন। অহেতুক ঝুঁকি নেবেন না।

স্থানীয়দের সঙ্গে শালীন আচরণ করুন এবং যেখানে-সেখানে ময়লা-আবর্জনা ফেলবেন না।

সর্বশেষ
জনপ্রিয়