ঢাকা, বুধবার   ২৬ জুন ২০২৪ ||  আষাঢ় ১৩ ১৪৩১

শেখ হাসিনার ভারত সফর : আলোচনায় গুরুত্ব পাবে নিরাপত্তা ও জ্বালানি

নিউজ ডেস্ক

প্রকাশিত: ২১:১৯, ১৬ জুন ২০২৪  

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

কিছুটা অস্পষ্টতা তৈরি হলেও চতুর্থ মেয়াদে সরকার গঠনের পর প্রথম দ্বিপাক্ষিক সফরে অবশেষে নয়াদিল্লি সফরে যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপরই বেইজিং সফরে যাবেন তিনি। বেইজিংয়ের পক্ষ থেকে আগেই চীন সফরের আমন্ত্রণ ছিল। অন্যদিকে নয়াদিল্লির তরফেও আমন্ত্রণ জানানো হয়। গত ৮ মে ভারতের জাতীয় নির্বাচন চলাকালীন সময়েই ঢাকা সফর করেন দেশটির পররাষ্ট্র সচিব বিনয় কোয়াত্রা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করে দিল্লি সফরের আমন্ত্রণপত্র পৌঁছে দেন তিনি। সূত্রমতে, পূর্বনির্ধারিত ২১-২২ জুন দিল্লি সফর করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। অন্যদিকে জুলাইয়ের প্রথম সপ্তাহে বেইজিং সফরের শিডিউল রয়েছে প্রধানমন্ত্রীর।

সম্প্রতি ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির শপথ অনুষ্ঠান উপলক্ষে গেল ৮-১০ জুন প্রধানমন্ত্রী ভারত সফর করেন। রাষ্ট্রাচারের ফাঁকে একান্ত বৈঠক করেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও শেখ হাসিনা। নিজেদের মধ্যে কুশল বিনিময়ের পাশাপাশি একে অপরকে সুবিধাজনক সময়ে সফর করার আমন্ত্রণ জানান তারা। ফলে সহসাই প্রধানমন্ত্রীর দ্বিপাক্ষিক ভারত সফর হচ্ছে না বলে খবর আসে। অন্যদিকে ভারতের প্রধানমন্ত্রীর বাংলাদেশ সফরের খবরও ডালপালা মেলে। কিন্তু সব কিছুর অবসান ঘটিয়ে অবশেষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরের দিনক্ষণ ঠিক হয়েছে।

কূটনৈতিক সূত্র বলছে, এখন পর্যন্ত সফরের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে দুই পক্ষের প্রস্তুতি চলছে। প্রধানমন্ত্রীর আসন্ন দিল্লি সফরে বেশ কয়েকটি চুক্তি ও সমঝোতা সইয়ের কথা রয়েছে। এর মধ্যে কয়েকটির মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে। তবে সফরের ঠিক আগ মুহূর্ত পর্যন্ত চুক্তি ও সমঝোতার সংখ্যার পরিবর্তন হতে থাকে। নতুন চুক্তি ও সমঝোতা স্মারকের (এমওইউ) মধ্যে ভারতের ঋণচুক্তি বাস্তবায়নে গতি আনতে নতুন রূপরেখা চুক্তি এবং বাংলাদেশে যে কোনো পরিস্থিতিতে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য সরবরাহ নিশ্চিত করার জন্য একটি এমওইউ স্বাক্ষরের মতো বিষয় বিবেচনায় রয়েছে। 

সূত্র জানিয়েছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এবারের দ্বিপাক্ষিক সফরটি হবে অত্যন্ত সংক্ষিপ্ত। ঠিক হয়েছে ২১ জুন শেখ হাসিনা দিল্লি পৌঁছবেন। তার পরের দিন মোদির সঙ্গে বৈঠক। সেখানে উঠে আসবে তিস্তাসহ বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে ৫৩টি অভিন্ন নদীর প্রসঙ্গ। নিরাপত্তা, প্রতিরক্ষা, যোগাযোগ, অভিন্ন নদীগুলোর পানিবণ্টন, স্থল ও সমুদ্রসীমায় বিরোধ নিরসন, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে সহযোগিতা ইত্যাদি নানা বিষয়ে আলোচনা হবে দুই নেতার। 

শেখ হাসিনা ও মোদির শাসনামলে দুই দেশ ‘সম্পর্কের নতুন উচ্চতায়’ পৌঁছেছে বলে দুই পক্ষ থেকেই বার্তা এসেছে। এক দেশের ভেতর অন্য দেশের ছিটমহল বিনিময়ের পর দুই দেশের স্থল সীমানা নির্ধারিত হয়েছে। অমীমাংসিত আরও অনেক সমস্যার সমাধানে দুই পক্ষ কাছাকাছি এসেছে। তবে আগের তুলনায় কমলেও সীমান্তে বিএসএফের ?গুলিতে হত্যা শূন্যে নামিয়ে আনার প্রতিশ্রুতির বাস্তবায়ন হয়নি। ফলে সীমান্ত বিরোধ মিটলেও সীমান্তে পাচার ও হত্যাকাণ্ড নিয়ে অস্বস্তি যেমন রয়ে গিয়েছে, তেমনই আবার এক যুগ পেরিয়ে গেলেও তিস্তা চুক্তির জট খোলা যায়নি। এছাড়া ২০২৬ সালের ডিসেম্বরে ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে গঙ্গা চুক্তির মেয়াদও শেষ হচ্ছে। বিষয়টিও উঠতে পারে দুই দেশের শীর্ষ নেতাদের আলোচনায়।

গতকাল পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রীর দিল্লি সফরের নানা কর্মসূচি চূড়ান্ত করার কাজ চলছিল। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে আনুষ্ঠানিক বৈঠক করার পাশাপাশি তিনি ভারতের রাষ্ট্রপতি দ্রোপদী মুর্মুর সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করবেন। এছাড়া রাজঘাটে মহাত্মা গান্ধীর স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা নিবেদনসহ আরও একাধিক কর্মসূচি যুক্ত হতে পারে। 

শেখ হাসিনার শেষ দ্বিপাক্ষিক সফর ছিল ২০২২ সালে। ওই বছরের ৫ থেকে ৮ সেপ্টেম্বর সেই সফরে দুই দেশের মধ্যে সাতটি সমঝোতা স্মারক সই হয়; আলোচনা হয় নিরাপত্তা সহযোগিতা, বিনিয়োগ, বাণিজ্য সম্পর্ক, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের সহযোগিতা, অভিন্ন নদীর পানিবণ্টন, পানিসম্পদ ব্যবস্থাপনা, সীমান্ত ব্যবস্থাপনা, মাদক চোরাচালান, মানবপাচার রোধ প্রসঙ্গে। ২০২৩ সালের ৮ থেকে ১০ সেপ্টেম্বর শেখ হাসিনা আবার ভারত যান জি-২০ সম্মেলনে আমন্ত্রিত অতিথি হিসেবে। এই সফরেও ভারতীয় প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক হয় তার। সই হয় তিনটি সমঝোতা স্মারক।

সর্বশেষ
জনপ্রিয়