ঢাকা, শুক্রবার   ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ||  আশ্বিন ৪ ১৪৩১

শেরপুরে প্রথমবারের তৈরি হচ্ছে পরিবেশবান্ধব ব্লক ইট

নিউজ ডেস্ক

প্রকাশিত: ১৪:৩৮, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪  

শেরপুরে প্রথমবারের তৈরি হচ্ছে পরিবেশবান্ধব ব্লক ইট

শেরপুরে প্রথমবারের তৈরি হচ্ছে পরিবেশবান্ধব ব্লক ইট

শেরপুরে প্রথমবারের মতো কাঠ, কয়লা ও মাটি ছাড়াই পরিবেশবান্ধব ইট তৈরি হচ্ছে। এই ইটের নাম ব্লক ইট। এটি তৈরির পুরো প্রক্রিয়াই প্রযুক্তিগত মেশিনের মাধ্যমে সম্পন্ন করা হয়। কারণ এই ইট পোড়াতে হয় না। তাই এটি পরিবেশ ও কৃষিজমির জন্য ক্ষতিকর না। স্থানীয়রা জানান, নতুন প্রযুক্তির মাধ্যমে তৈরি এই ইট দেখতে যেমন সুন্দর, তেমনই মজবুত। সংশ্লিষ্টরা জানান, সাশ্রয়ী ও ভূমিকম্প সহনশীল হওয়ায় এই ব্লক ইটের ব্যবহার দিন দিন জনপ্রিয় হচ্ছে।পরিবেশ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, জেলায় ৬১টি ইটভাটা রয়েছে। এর মধ্যে পরিবেশ অধিদপ্তরের সব কাগজপত্রে বৈধতা রয়েছে মাত্র তিনটির। জেলার বিভিন্ন এলাকায় কৃষিজমি, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ জনবসতি এলাকায় অবৈধভাবে নিবন্ধনবিহীন অসংখ্য ইটভাটা পরিচালনা করছে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী। একই সঙ্গে নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে পোড়ানো হচ্ছে বনের কাঠ। কৃষকের দুই-তিন ফসলি জমির ঊর্বর মাটিও কেটে ইট তৈরির কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে। 

তবে নতুন করে আশার আলো দেখা যাচ্ছে, আধুনিক প্রযুক্তির ছোঁয়ায় পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করে জেলায় ইতোমধ্যে দুটি ব্লক ইটভাটা চালু হয়েছে। ইট বানাতে এখানে নুড়ি পাথর, বালি, সিমেন্টসহ পাঁচটি উপকরণ ব্যবহার করা হচ্ছে। সাধারণ ইটের তুলনায় ব্লক ইটের পিএসআই দ্বিগুণ। এটি সাশ্রয়ী ও পরিবেশবান্ধব। প্রতিদিন একটি মেশিনে ৮ থেকে ১০ জন শ্রমিক ব্যবহার করে ১০ থেকে ১২ হাজার ইট তৈরি করা হচ্ছে। 

ব্লক ইটের প্রযুক্তির মেশিন অপারেটর আবু সাঈদ বলেন, ‘সিমেন্ট, বালি ও পাথরের মাধ্যমে একটি রেশিও রয়েছে। সেটার মাধ্যমে আমরা মিক্সার হপারে দিই। সেখান থেকে মিক্সিং হয়ে কনভেয়ার বেল্টের মাধ্যমে ব্লক প্ল্যান্টে আসে। এখান থেকে আমরা পাঁচ টন প্রেশারে ব্লক ইট তৈরি করি। এগুলো অনেক স্থায়ী, টেকসই ও মজবুত। এগুলো সহজে নোনা ধরে না এবং দীর্ঘস্থায়ী হয়। বর্তমান সরকার মাটির ইটভাটা বন্ধ করার উদ্যোগ নিয়েছে, যার জন্য এই মেশিনগুলোর চাহিদা বেড়েছে।’

আরেক বাসিন্দা মিস্টার আলী বলেন, ‘শেরপুরে অনেক ফসলি জমি নষ্ট করে ভাটার কারণে আমাদের কৃষিতে অনেক ক্ষতি হয়েছে। বর্তমানে ব্লক ইট তৈরির জন্য জেলায় দুটি মেশিন ব্যবহার করা হচ্ছে। আমি গিয়ে দেখেছি, সহজে ইট তৈরি হচ্ছে, কোনো ময়লা-আবর্জনা, ধোঁয়া কিছুই নেই। বালি, সিমেন্ট ও পাথর দিয়ে মেশিনের মাধ্যমে ইট তৈরি হচ্ছে। এই ধরনের ইটভাটা বেশি বেশি স্থাপন করতে হবে। এতে আমাদের কৃষি ও পরিবেশ বাঁচবে।’

ব্যবসায়ী আকরাম মিয়া বলেন, ‘আমি এই ইট দিয়ে রাস্তার কাজ করেছি। এটি অনেক শক্তিশালী হয় এবং দেখতেও সুন্দর। এই ইট পরিবেশবান্ধব। এই ব্লক ইটভাটা ফসলি জমিতে প্রভাব ফেলে না। পরিবেশ দূষণ করে না।’

উদ্যোক্তা ইলিয়াস আলী বলেন, ‘কিছুদিন ধরে এই ব্লক ইট তৈরি করে বিক্রি করছি। এটি পরিবেশবান্ধব। এতে ফসলি জমির কোনো ক্ষতি হচ্ছে না। এই ইট ব্যবহার সাশ্রয়ী। এটি তৈরি হয় সিলেকশন বালি ও এলসি পাথর দিয়ে তৈরি করি। এ ছাড়া সিমেন্টও ব্যবহার করা হয়। ব্লক ইটে পিএসআই অনেক বেশি থাকে। এর গুণগত মান অনেক ভালো।’

জেলা পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক মো. নূর কুতুব আলম সিদ্দিক বলেন, ‘ব্লক ইট প্রযুক্তিসম্পন্ন ও পরিবেশবান্ধব। এভাবে ইট তৈরি করলে জেলায় গারো পাহাড়ের গাছ কাটা বন্ধ হবে। কৃষিজমির মাটির টপ সয়েল নষ্ট হওয়া থেকে মুক্তি পাবে। একই সঙ্গে পরিবেশ দূষণ হবে না।’ তিনি আরও বলেন, ‘পরিবেশবান্ধব ব্লক ইটভাটা তৈরির জন্য সরকার কাজ করে যাচ্ছে। এ বিষয়ে উদ্যোক্তাদের সহযোগিতা করা হবে।’ 

আরও পড়ুন
সারাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত
সর্বশেষ
জনপ্রিয়