ঢাকা, শুক্রবার   ২৮ জুন ২০২৪ ||  আষাঢ় ১৪ ১৪৩১

সরকার সৃজনশীল শিক্ষা ব্যবস্থা চায় ॥ প্রধানমন্ত্রী

নিউজ ডেস্ক

প্রকাশিত: ১১:৪৭, ২৫ জুন ২০২৪  

সরকার সৃজনশীল শিক্ষা ব্যবস্থা চায় ॥ প্রধানমন্ত্রী

সরকার সৃজনশীল শিক্ষা ব্যবস্থা চায় ॥ প্রধানমন্ত্রী

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শিক্ষার মান উন্নয়নে সরকারের নেওয়া বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা তুলে ধরে বলেছেন, তাঁর সরকার এমন একটা সৃজনশীল শিক্ষা ব্যবস্থায় যেতে চায়, যেখানে শিক্ষার্থীরা আনন্দমুখর পরিবেশে নিজেরাই আগ্রহ নিয়ে পড়াশোনা করবে। সরকার সে রকম একটা সৃজনশীল শিক্ষা ব্যবস্থা চায়।
আত্মমর্যাদাবোধ ও আত্মবিশ্বাস মানুষকে শক্তি দেয় জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, কেউ সমালোচনা করলেই ভীত হয়ে যেতে হবে, আমি এটা বিশ্বাস করি না। শিক্ষার্থীদের বলব, সব সময় এটাই চিন্তা করতে হবে। কে কি বলল, তার জন্য চোখের পানি ফেলে মুখ লুকাতে হবে, তা না। নিজের বিশ্বাস থেকে শিখতে হবে। তাহলে এ দেশকে তোমরা এগিয়ে নিয়ে যেতে পারবে।
সোমবার রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে এক অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন। এ অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী মাধ্যমিক থেকে স্নাতক ও সমমান পর্যায়ের অসচ্ছল মেধাবী শিক্ষার্থীদের মাঝে উপবৃত্তি ও টিউশন ফি বিতরণ কার্যক্রম উদ্বোধন এবং ‘বঙ্গবন্ধু সৃজনশীল মেধা অন্বেষণ-২০২৪’ এর সেরা মেধাবী পুরস্কার এবং ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব স্কলার অ্যাওয়ার্ডÑ২০২৩’ বিতরণ করেন।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের প্রিয় শিক্ষার্থীদের বলব আমরা দায়িত্ব নেওয়ার পর, আওয়ামী লীগ সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পরই পরিবর্তনশীল বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে সৃজনশীল শিক্ষার ব্যবস্থা, পাঠ্যপুস্তক, পাঠ্যপুস্তকের শিক্ষাক্রমÑ সব কিছু আমরা (আধুনিক করি)। মেধা অন্বেষণ, মেধার মাধ্যমে শিক্ষাকে আরও আপন করে নেওয়া, শিক্ষাটা একটা আনন্দমুখর পরিবেশে করা, সেই পদ্ধতিটাতে আমরা আসতে চাই।
শেখ হাসিনা বলেন, এখন যদি সারাক্ষণ কেউ বলে পড় পড় পড়, এটা কি ভালো লাগে বলো। মোটেই ভালো লাগে না। যা-ও একটা পড়ার ইচ্ছে থাকে তা-ও নষ্ট হয়ে যায়, এটা কিন্তু বাস্তব কথা। সেই জন্য এমনভাবে শিক্ষা ব্যবস্থাটা করা যে, আগ্রহ নিয়েই ছেলেমেয়েরা পড়বে; পড় পড় করতে হবে না বা ধরে পেটাতে হবে না। নিজেরাই পড়বে, নিজেদের মধ্যেই সেই আকাক্সক্ষাটা থাকবে। আমরা সেই সিস্টেমটাই তৈরি করতে চাই।
নতুন কারিকুলাম নিয়ে অনেকের সমালোচনা প্রসঙ্গে টানা চারবারের সরকারপ্রধান বলেনÑ জানি, একটা পরিবর্তন আসলে অনেকেই নানা ধরনের কথা বলে। তা ছাড়া ডিজিটাল বাংলাদেশ, সোশ্যাল মিডিয়ায় যার যা মনে আছে, সমালোচনা করতে পারলেই খুশি। আমরা আবার বাঙালি, পরচর্চায় খুব পছন্দ করি। পরচর্চা ছাড়া তো আসরই জমে না। যে যা মনে করে, লিখে দেয়।
শেখ হাসিনা বলেন, শিক্ষামন্ত্রী বলছেÑ এটা লিখল, ওটা লিখল। আমি বলেছি, এটা লিখল, ওটা লিখলÑ শুনবা না তো। নিজের মনে আত্মবিশ্বাস থাকতে হবে। নিজের ওপর বিশ্বাস থাকতে হবে। দায়িত্ব যখন নেবে দেশের জন্য কোনটা ভালো, সেটা নিজের চিন্তা থেকে আসতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, কেউ একটু সমালোচনা করলেই ওমনিই সেটার জন্য ভীত হয়ে যেতে হবে, আমি এটা বিশ্বাস করি না। আত্মমর্যাদাবোধ, আত্মবিশ্বাসÑ এটাই মানুষকে শক্তি দেয়। আমি আমাদের শিক্ষার্থীদের এটাই বলবÑ সব সময় এই চিন্তাটাই করতে হবে। কে কি বলল, সেটা শুনে ওমনিই চোখের পানি ফেলানো, মুখ লুকানোÑ তা না। নিজে বিশ্বাস থেকে চলা শিখতে হবে। তাহলে এই দেশকে তোমরা এগিয়ে নিয়ে যেতে পারবে। 

অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী, প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা ও সংস্কৃতিবিষয়ক উপদেষ্টা ড. কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী, শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী বেগম শামসুন নাহার, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সচিব সোলেমান খান। 
‘বঙ্গবন্ধু সৃজনশীল মেধা অন্বেষণ’ প্রতিযোগিতায় পুরস্কারপ্রাপ্ত ১৫ শিক্ষার্থীর প্রত্যেকেই দুই লাখ টাকা ও একটি সনদপত্র পেয়েছেন। এ ছাড়া, ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব স্কলার অ্যাওয়ার্ড’প্রাপ্ত ২১ শিক্ষার্থীর প্রত্যেকেই একটি সনদপত্র ও তিন লাখ টাকা করে পেয়েছেন।
হাজারীবাগ গার্লস স্কুল অ্যান্ড কলেজের অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী নুসরাত জাহান মালিহা, দিনাজপুরের আমেনা-বাকি রেসিডেন্সিয়াল মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজের দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী আতিফা রহমান, খুলনার সরকারি মজিদ মেমোরিয়াল কলেজের পিনাকমুগ্ধ দাস ‘বঙ্গবন্ধু সৃজনশীল মেধা অন্বেষণ-২০২৪’ এর পক্ষে এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই শিক্ষার্থী যথাক্রমে জেরিন তাসনীম রাইসা ও আল ফয়সাল বিন কাসেম কানন ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব স্কলারর্স অ্যাওয়ার্ড’-২০২৩ এর পক্ষে অনুষ্ঠানে নিজ নিজ অনুভূতি ব্যক্ত করেন।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের একটি উদ্বৃতির কথা উল্লেখ করে তাঁর কন্যা শেখ হাসিনা বলেন, জনগণের সেবা করা, জনগণের পাশে দাঁড়ানো, জনগণের জন্য কল্যাণ করাÑ এটাই হবে মানুষের সবচেয়ে বড় দায়িত্ব। খালি আমি নিজে শিক্ষিত হব, নিজে অর্থ কামাই করব, নিজেই ভালো থাকব, আমি দেশকে কিছু দেব না, আশপাশের মানুষ দরিদ্র থাকবেÑ এটা হয় না।
তিনি বলেন, সকলে মিলেই আমাদের চলতে হবে, সকলে মিলে আমাদের এগিয়ে যেতে হবে। সেই নির্দেশনাটা জাতির পিতা দিয়ে গেছেন, আমরা সেটাই অনুসরণ করি। নতুন প্রজন্ম বাংলাদেশকে এগিয়ে নেবেÑ এই আশাবাদ ব্যক্ত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তিনি বিশ্বাস করেন, সকল বাধা অতিক্রম করে বাংলাদেশের এই অগ্রযাত্রা আমাদের তরুণ সমাজই এগিয়ে নিয়ে যাবে। 
পরিবর্তনশীল বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে এগিয়ে যেতে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি শিক্ষার ওপর গুরুত্বারোপ করেন সরকারপ্রধান। তিনি বলেন, স্টাইপেন্ড ও টিউশন ফির টাকা ডিজিটাল পদ্ধতিতে সরাসরি সুবিধাভোগীদের কাছে পৌঁছে যাবে। ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে মেধাবী শিক্ষার্থীদের মধ্যে স্টাইপেন্ড এবং টিউশন ফি বাবদ অর্থ বিতরণ করতে পেরে আমি খুবই আনন্দিত। মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিক, স্নাতক এবং সমমানের ৬৪ লাখ ৭০ হাজার শিক্ষার্থীর মধ্যে সর্বমোট ২ হাজার ২শ’ ৮ কোটি টাকা বিতরণ করা হবে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০০৯ সালে যখন সরকার গঠন করি, তখন শিক্ষা ও গবেষণার কাজে আরও বরাদ্দ বাড়াই। ২০১০ থেকে বিনা পয়সায় বই দেওয়া শুরু করি। অনেকে ভেবেছে যে, এটা কীভাবে সম্ভব? আমরা সেই অসম্ভবকে সম্ভব করেছি। ছেলেমেয়েরা যাতে বিভিন্ন ধরনের শিক্ষায় শিক্ষিত হতে পারে, দেশ-বিদেশের কর্মমুখী শিক্ষা গ্রহণ করতে পারে, সেদিকে লক্ষ্য রেখে বহুমুখী শিক্ষার ব্যবস্থা ও উচ্চশিক্ষার ব্যবস্থা করে দিয়েছি। 
বিজ্ঞান, গবেষণা ও প্রযুক্তিজ্ঞান ছাড়া কোনো দেশ বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে পারে না জানিয়ে সরকারপ্রধান বলেন, তখন কেউ কম্পিউটার ব্যবহার করত না।

টেলিফোন ছিল অ্যানালগ। আমরা টেলিফোন সিস্টেমকে ডিজিটালাইজ করি, কম্পিউটার শিক্ষার জন্য সুযোগ সৃষ্টি করি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের যাত্রা শুরু হয় দুই-তিনটা কম্পিউটার দিয়ে। ছেলেমেয়েরা যাতে উন্নত শিক্ষা নিতে পারে, তার ব্যবস্থা আমরা নিয়েছি। তা ছাড়া আইন পাস করে ১২টি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্মাণ কাজ শুরু করি।
শেখ হাসিনা বলেন, জাতীয় শিক্ষানীতি আমরা করে গিয়েছিলাম। কিন্তু ২০০১ সালে আমরা ক্ষমতায় আসতে পারিনি, আর বিএনপি সেটা বাতিল করে দেয়। ২০০৯ সালে যখন সরকার গঠন করি, তখন শিক্ষা ও গবেষণার কাজে আরও বরাদ্দ বাড়াই। ২০১০ থেকে বিনা পয়সায় বই দেওয়া শুরু করি। অনেকে ভেবেছে যে, এটা কীভাবে সম্ভব? আমরা সেই অসম্ভবকে সম্ভব করেছি। ২০১০ থেকে ২০২৪ পর্যন্ত ৪৬৪ লাখ ২৯ হাজার ৮৮৩ কোটি পাঠ্যপুস্তক বিনামূল্যে বিতরণ করেছি।
স্বাধীনতাকে ব্যর্থ করার জন্য অনেক চক্রান্ত হয়েছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সব অতিক্রম করে আমরা এগিয়ে যাচ্ছি, আরও এগিয়ে যেতে হবে। বাংলাদেশ এখন বিশ্বের কাছে উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে স্বীকৃত। কিছু লোকের সব সময় কোনো কিছু ভালো লাগে না। আর ভালো হতেও দিতে চায় না। তাদের পাত্তা না দিলেও চলবে। আমরা ডিজিটাল বাংলাদেশ করেছি, এখন স্মার্ট বাংলাদেশ করতে হবে। 

সর্বশেষ
জনপ্রিয়