সেন্টু হাজং প্রতিবছর আবিষ্কার করেন নতুন দেশী ধান

7

শেরপুর জেলার নালিতাবাড়ী উপজেলার নয়াবিল ইউনিয়নের চাটকিয়া গ্রামের কৃষক সেন্টু চন্দ্র হাজং প্রতিবছর আবিষ্কার করেন দেশী আমন জাতের ধান। একইসঙ্গে তিনি বিলুপ্তপ্রায় ধান সংরক্ষণ করে চলেছেন। তার আবিষ্কৃত নতুন জাতের ধান আবাদ করে এলাকার কৃষকরা ভালো ফলন পাচ্ছেন ও আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছেন। কৃষক সেন্টু হাজং ২০০৫ সালে স্থানীয় একটি বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থার মাধ্যমে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে দেশী জাতের ধান আবিষ্কার ও বিলুপ্তপ্রায় দেশী ধান সংরক্ষণ করা শুরু করেন।

এ পর্যন্ত তিনি ২৩টি নতুন জাতের দেশী আমন জাতের ধান আবিষ্কার করেছেন। তার আবিষ্কৃত আতপ সেন্টু শাইল ও সেন্টু পাইজাম  (সেন্টু- ২১) নালিতাবাড়ী উপজেলায় বেশ আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। ২০২২ সালে তিনি নতুন করে সরু আতপ জাতের সেন্টু- ২৩ জাতের ধান আবিষ্কার করেছেন। আগামী বছর আমন আবাদের জন্য তিনি এই নতুন জাত বাজারজাত করবেন। সেন্টু হাজং জানান, নিজের আগ্রহ থেকেই তিনি এই নতুন ধান আবিষ্কার করেন ও দেশী জাতের ধান সংরক্ষণ করেন।

এজন্য তিনি ব্রিডিং বা সংকরায়ন পদ্ধতি অবলম্বন করেন। একটি নতুন জাতের ধান আবিষ্কার করতে তার সময় লাগে প্রায় ৭ বছর। তাই নিজের আবাদি জমিতে ৩৭০টি প্লটে ট্রায়াল প্লট তৈরি করেছেন। এ বছর কয়েকটি নতুন জাত আবিষ্কার করা হলেও সেন্টু-২৩ চিকন ও সরু আতপ দেশী জাতের ধান বাজারজাত করবেন। তিনি আরও জানান, নিজে কৃষক হওয়ার সুবাদে এই কাজে তিনি বেশ আনন্দ ও তৃপ্তি পান। তিনি চান স্থানীয় কৃষিতে তার সামান্য অবদান রাখতে।

উপজেলার আন্ধারুপাড়া গ্রামের কৃষক হাবিল উদ্দিন বলেন, আমি এ বছর আমার ১ একর ৫০ শতাংশ জমিতে সেন্টুর আবিষ্কার করা সেন্টু পাইজাম (সেন্টু-২১) জাতের ধান আবাদ করেছিলাম। শুকিয়ে ৫০-৬০ মণ হারে ফলন পেয়েছি। এই জাতের ধানের চাহিদা বেশি ও দামও ভালো। সেন্টু পাইজামের বর্তমান বাজারদর ১ হাজার ৩৫০ টাকা থেকে ১ হাজার ৪৫০ টাকা প্রতিমণ। তবে তিনি বলেন, কৃষি শ্রমিক সংকট, ধানক্ষেত লাগানো, নিড়ানী, কৃষি উপকরণ ও ধান মাড়াই করাসহ সব জিনিসের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় এই দামে আমাদের পুষায় না।

আপর কৃষক আব্দুল খালেক বলেন, আমি এবার ৪০ শতাংশ জমিতে সেন্টু শাইল চিকন আতপ জাতের ধান লাগিয়েছিলাম। শুকিয়ে ৪০-৪৫ মণ হারে ফলন পেয়েছি। এই জাতের ধানের বর্তমান বাজারদর ১ হাজার ৮০০ থেকে ২ হাজার টাকা প্রতিমণ। ফলন ভালো হওয়ায় প্রতিবছর সেন্টু শাইল ও সেন্টু পাইজাম ধান আমি আবাদ করি।

এ ব্যাপারে নালিতাবাড়ী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আলমগীর কবির বলেন, কৃষক সেন্টু হাজং নিজ উদ্যোগে দেশি জাতের ধান আবিষ্কার করে স্থানীয় কৃষিতে বেশ অবদান রেখে চলেছেন। তার এই পথ চলায় উপজেলা কৃষি বিভাগ থেকে সব ধরনের পরামর্শ ও সার্বিক সহযোগিতা প্রদান করা হবে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here